কলসিন্দুর স্কুলে আগুনের রহস্য উন্মোচিত হয়নি

দুর্বৃত্তের আগুনে পুড়েছে কলসিন্দুর উচ্চমাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের নারী ফুটবলারদের অর্জিত সনদ।  ফাইল ছবি
দুর্বৃত্তের আগুনে পুড়েছে কলসিন্দুর উচ্চমাধ্যমিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের নারী ফুটবলারদের অর্জিত সনদ। ফাইল ছবি

কৃতী নারী ফুটবলারদের প্রতিষ্ঠান খ্যাত কলসিন্দুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় বহু প্রতীক্ষার পর সরকারি হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে কোনো আনন্দের আমেজ নেই বিদ্যালয়ে বা গ্রামে। নেই কোনো বিশেষ আয়োজনও। সব আনন্দে বিষাদের কাঁটা হয়ে ফুটছে একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। তবে দুই সপ্তাহ হলেও এখনো জানা যায়নি কারা, কেন বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে আগুন দিয়ে ফুটবলারদের কৃতিত্বের স্মারকসহ অন্য কাগজপত্র পুড়িয়ে দিল। পেছন থেকে কলকাঠিই বা নাড়াচ্ছে কে?

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যুক্ত সন্দেহে বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলছেন স্থানীয় এক রাজনীতিবিদসহ কয়েকজনের নাম। তাঁদের সন্দেহ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি পুনর্গঠন নিয়ে বিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আবার পুলিশ বলছে, শিক্ষকদের মধ্যেও কোন্দল রয়েছে। পাল্টাপাল্টি সন্দেহের তিরে একে অন্যকে বিদ্ধ করার চেষ্টা করছে পক্ষগুলো।

৫ মে থেকে স্কুল শাখা বন্ধ ছিল। তবে পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ ক্লাস নিতে ১৪ মে বিদ্যালয়ে যান শিক্ষক উজ্জ্বল চন্দ্র পাল। সকাল সাড়ে ৭টায় তিনি স্কুলে আসার পর সপ্তম শ্রেণির একজন ছাত্রকে শ্রেণিকক্ষ খোলার জন্য অফিসকক্ষে চাবি আনতে পাঠান। ওই ছাত্র সেখানে গিয়ে দেখতে পায় অফিসকক্ষ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। দরজায় তালা নেই। বিষয়টি উজ্জ্বল চন্দ্র পালকে জানালে তিনি গিয়ে দেখেন, টেবিলের ওপর নারী ফুটবলারদের মেডেল ও সনদ পুড়ছে। তখন উপস্থিত সবাই আগুন নেভান এবং প্রধান শিক্ষক ও অন্যদের খবর দেন।

ঘটনার পর এলাকাবাসী ও শিক্ষকেরা প্রথমে মাদকসেবীদের সন্দেহ করলেও পরে তাঁদের মনে হয়, স্কুলটি যেন সরকারি না হয়, সে জন্যই এ ষড়যন্ত্র। কিন্তু ঘটনার এক দিন পরই স্কুলটি জাতীয়করণের চিঠি যখন শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায়, তখন সবাই নতুন কারণ খুঁজতে লেগে পড়েন।

>

সন্দেহে বরখাস্ত শিক্ষক ও ইউপি চেয়ারম্যান
এসপি বললেন, পরিকল্পিত ঘটনা।

পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের মনে হচ্ছে ঘটনাটি পরিকল্পিত। একজন ইউপি চেয়ারম্যান ও বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকসহ এলাকার বেশ কয়েকজন আমাদের সন্দেহের তালিকায় আছেন।’

সন্দেহের তিরে বিদ্ধ সবাই

কলসিন্দুর বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ, শিক্ষক ও এলাকাবাসী আগুন লাগানোর জন্য একজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে সন্দেহের কথা জানিয়েছেন। ওই চেয়ারম্যান বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হতে চেয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত হতে পারেননি। তাঁরা বরখাস্ত হওয়া এক শিক্ষকের কথাও বলেছেন।

সন্দেহের বিষয়ে ওই ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে অভিযুক্ত করে শিক্ষকেরা আসল ঘটনা ধামাচাপা দিতে চাইছেন। আমি সভাপতি হতে চেয়েছি, আমার অধিকার আছে। কমিটিতে সকলের মতামতও ছিল। কিন্তু আমাকে তারা সভাপতি দেয়নি। আমি আর এ নিয়ে কথা বলিনি।’ তাঁর দাবি, বিদ্যালয় সরকারি হওয়ার পর যাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা তৃতীয় শ্রেণি, তাঁরা থাকতে পারবেন না বলে ভয়ে নিজেদের সনদ পুড়িয়ে দিয়েছেন। সঙ্গে পুড়িয়েছেন ফুটবলারদের সনদ ও মেডেল।

বরখাস্ত হওয়া শিক্ষককে সন্দেহ করা প্রসঙ্গে ওই চেয়ারম্যান বলেন, ‘যে শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে তিনি তো পলাতক আছেন। তিনি কী করে আগুন দেবেন?’বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রতন মিয়া এ বিষয়ে বলেন, পুলিশ তদন্ত করছে। এ নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

বিভাগীয় কমিশনার মাহমুদ হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্কুল কর্তৃপক্ষ মামলা করতে এত দেরি করল কেন, সে বিষয়টি আমাদের ভাবাচ্ছে। এত বড় একটি ঘটনায় তাদের তো দেরি করার কথা নয়। তাদের ওপর কোনো চাপ ছিল কি না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।’