কিশোরীকে অ্যাসিড নিক্ষেপের অভিযোগে মামলা, স্বামী গ্রেপ্তার

স্বামীর অ্যাসিড-সন্ত্রাসের শিকার
প্রতীকী ছবি

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় অ্যাসিড-জাতীয় পদার্থ ছুড়ে কিশোরী স্ত্রীর (১৫) মুখ ঝলসে দেওয়ার ঘটনায় মুরাদ হোসেন (৩০) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার কুমরপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এর আগে শুক্রবার রাতেই মুরাদকে একমাত্র আসামি করে গোদাগাড়ী থানায় মামলা করেন মেয়েটির মা। জেলা পুলিশের মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মামলার এজাহারে বলা হয়েছে যে মুরাদ অ্যাসিড ছুড়ে কিশোরী মেয়েটির মুখ ঝলসে দিয়েছেন। তবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও গোদাগাড়ী থানা জানিয়েছে, অ্যাসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে কিনা তা পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।

র‍্যাব-৫-এর রাজশাহী মোল্লাপাড়া ক্যাম্পের একটি দল এই অভিযান চালায়। ভুক্তভোগী মেয়েটি স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় দশম শ্রেণিতে পড়ে। তার বাবা ট্রাক চালান। আর মেয়েটির স্বামী মুরাদ ট্রাকচালকের সহকারী। ঘটনার পরপরই মুরাদ পালিয়ে গিয়েছিলেন।

মেয়েটির বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ির দূরত্ব পাঁচ মিনিটের হাঁটাপথ। দেড় বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন তাঁরা, যদিও মেয়েটি অপ্রাপ্তবয়স্ক। পরে বনিবনা না হওয়ায় কিশোরী মেয়েটি আর সংসার করতে চায়নি।

ঘটনাটি ঘটেছে মুরাদের শ্বশুরবাড়িতে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে গরমের কারণে জানালা খোলা রেখেই মেয়েটি তার মা ও ভাইয়ের সঙ্গে একই ঘরে ঘুমিয়েছিল। এর মধ্যে দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে জানালা দিয়ে বাইরে থেকে একধরনের তরল দাহ্য পদার্থ এসে পড়ে মেয়েটির চোখে-মুখে। সে তীব্র যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকে। পুড়ে যায় মেয়েটির চোখ-মুখ। দগ্ধ অবস্থায় ভোরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।

পোড়ার ক্ষত অ্যাসিডের মতোই লাগছে। রাসায়নিক পরীক্ষায় এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
আফরোজা নাজনীন, বার্ন ইউনিট প্রধান, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

মেয়েটির মায়ের দাবি, মেয়ের মুখে অ্যাসিড ছোড়া হয়েছে। অ্যাসিড ছুড়ে পালানোর সময় তিনি তাঁর জামাতা মুরাদকে জানালার পাশ থেকে পালিয়ে যেতে দেখেছেন।
র‍্যাব-৫-এর রাজশাহীর কোম্পানি অধিনায়ক এ টি এম মাইনুল ইসলাম বলেন, গণমাধ্যমে সংবাদ দেখেই তাঁরা মুরাদকে আটকের জন্য তৎপর হয়ে ওঠেন। মুরাদ সারা দিন গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও রাতে বাড়ি ফেরেন। এরপরই তাঁর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁকে গোদাগাড়ী থানায় হস্তান্তর করে শাশুড়ির করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ইসলাম বলেন, মেয়েটির বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ির দূরত্ব পাঁচ মিনিটের হাঁটাপথ। দেড় বছর আগে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন তাঁরা, যদিও মেয়েটি অপ্রাপ্তবয়স্ক। পরে বনিবনা না হওয়ায় কিশোরী মেয়েটি আর সংসার করতে চায়নি। তাই চার মাস ধরে বাবার বাড়িতেই থাকত। এ কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে তার ওপর অ্যাসিড-জাতীয় দাহ্য পদার্থ নিক্ষেপ করেন মুরাদ। গ্রেপ্তার মুরাদকে শনিবারই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে। ওসি আরও বলেন, তাঁরা ধারণা করছেন মেয়েটির ওপর অ্যাসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে। তবে পরীক্ষার পর বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান আফরোজা নাজনীন বলেন, কোনো রাসায়নিক পদার্থে মেয়েটির মুখের বাঁ অংশের পুরোটা পুড়ে গেছে। চোখের পাতাও পুড়ে গেছে। এ ছাড়া গলা ও বাঁ হাতের কনুই পুড়েছে। মুখের ত্বক পুড়ে কালো হয়ে গেছে। এতে গভীর ক্ষত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিন-চার দিন পর বোঝা যাবে, কেমন ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, পোড়ার ক্ষত অ্যাসিডের মতোই লাগছে। রাসায়নিক পরীক্ষায় এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তিনি বলেন, দাহ্য পদার্থে ঝলসে যাওয়া ওই কিশোরীর চিকিৎসা চলছে। সে এখন শঙ্কামুক্ত। তবে সুস্থ হয়ে উঠতে কিছুদিন সময় লাগবে।