বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে এভাবে পাঁচটি গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। এমন একটি গাছের গোড়া পড়ে আছে। গতকালের ছবি l প্রথম আলো
বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে এভাবে পাঁচটি গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। এমন একটি গাছের গোড়া পড়ে আছে। গতকালের ছবি l প্রথম আলো

বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ চত্বর থেকে পাঁচটি গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি বেলজিয়ামগাছের বয়স আনুমানিক ২৫-৩০ বছর। কলেজ ক্যানটিনের সামনে এবং অধ্যক্ষের কার্যালয়ের পেছনে বিশাল আকৃতির মূল্যবান এসব গাছ কেটে নেওয়া হলেও কলেজ প্রশাসন বলছে, বিষয়টি তাদের জানা নেই।

গতকাল রোববার কলেজ ক্যাম্পাসে এসে কাটা গোড়া দেখে গাছ কাটার বিষয়টি শিক্ষার্থীদের নজরে আসে। শিক্ষার্থীদের ধারণা, গত শুক্রবার ক্যাম্পাস ফাঁকা পেয়ে দিনদুপুরে অথবা শুক্র বা শনিবার রাতে এসব গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। এসব গাছের বাজারমূল্য অর্ধলক্ষাধিক টাকা।

কলেজের প্রশাসন ভবনে এবং অধ্যক্ষের বাসভবনে দিনে-রাতে নিরাপত্তা প্রহরী থাকার পরও ক্যাম্পাস থেকে কীভাবে পাঁচটি গাছ কেটে নেওয়া সম্ভব হলো তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

কলেজের ১০ জন শিক্ষার্থী এবং কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত দুজন শিক্ষক জানিয়েছেন, ৬৩ একর আয়তনবিশিষ্ট এই কলেজের চত্বরে ২৫-৩০ বছর বয়সী বহু গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৫ সালের ৪ এপ্রিল ঝড়ে কিছু গাছের ডালপালা ভেঙে যায়। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ দেখিয়ে কলেজ প্রশাসন দরপত্র কিংবা নিলাম ছাড়াই ৭৪টি গাছ কেটে ফেলে। এ নিয়ে ওই বছরের ১০ এপ্রিল প্রথম আলোয় প্রতিবেদন ছাপা হয়। এরপরও থেমে নেই ক্যাম্পাসের গাছ কাটা। দিনে-রাতে প্রায়ই কলেজ ক্যাম্পাস থেকে মূল্যবান গাছ কেটে নেওয়া হচ্ছে।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কলেজের প্রভাবশালী একটি ছাত্রসংগঠনের কয়েকজন নেতা ক্যাম্পাসের গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত। তাঁরা কলেজ প্রশাসনের নাকের ডগায় কলেজ চত্বর থেকে গাছ কেটে নিচ্ছেন। ওই নেতারা প্রভাবশালী হওয়ায় দেখেও না দেখার ভান করছে কলেজ প্রশাসন।

গতকাল সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, করাত দিয়ে কেটে নেওয়া গাছের গোড়া পড়ে আছে। পাঁচটি গাছের মধ্যে দুটি বেলজিয়ামগাছ বেশ বড়। বাকি তিনটি গাছের বয়স ১০ থেকে ১২ বছর। যেখান থেকে গাছ কাটা হয়েছে, সেখান থেকে সামান্য দূরে অধ্যক্ষের সরকারি বাসভবন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজের দুজন শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, কলেজের প্রভাবশালী একটি ছাত্রসংগঠনের শীর্ষ নেতারা এসব গাছ কেটে বিক্রি করে দিয়েছেন। আগেও ওই নেতারা ক্যাম্পাসের বহু গাছ কেটেছেন। এভাবে গাছ কাটা চলতে থাকলে ক্যাম্পাসের সব গাছ উজাড় হবে।

সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ সামস-উল-আলম প্রথম আলোকে বলেন, কলেজ ক্যাম্পাস থেকে গাছ কাটার বিষয়টি তাঁর নজরে আসেনি। গাছ কাটার বিষয়টি কেউ তাঁকে বলেনি। এ কারণে গাছ কাটার সঙ্গে কারা জড়িত তা তিনি বলতে পারছেন না। খোঁজখবর নিয়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান তিনি।