‘খেলা হবে’ বলে আগেই ফেসবুকে হুমকি দিয়েছিলেন অস্ত্রধারীরা      

মো. শাখাওয়াত। নৌকার প্রার্থীর পক্ষে অস্ত্রবাজিতে নামেন
ছবি: প্রথম আলো

অস্ত্রের ঝনঝানিতে ইতিমধ্যে দেশব্যাপী আলোচিত সাতকানিয়ার খাগরিয়া ইউনিয়ন। সোমবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দুটি কেন্দ্র ঘিরে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর অনুসারীদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। আজ বুধবার প্রথম আলোর প্রথম পাতায় অস্ত্রধারী আটজনের ছবি প্রকাশিত হয়। তাঁদের মধ্যে সাতজনের পরিচয় জানা হয়েছে।
পরিচয় পাওয়া অস্ত্রধারীদের মধ্যে ছয়জনই নৌকার প্রার্থী মো. আকতার হোসেনের অনুসারী। তাঁদের মধ্যে মো. আবছার নামের অস্ত্রধারীই কেবল স্বতন্ত্র প্রার্থী জসিম উদ্দিনের অনুসারী। জসিম উদ্দিনের আরও অনুসারীর হাতে অস্ত্র থাকলেও তাঁদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। স্থানীয় ব্যক্তিরা তাঁদের বহিরাগত বলছেন।

অস্ত্রধারীদের মধ্যে ছয়জনের পরিচয় গতকালই নিশ্চিত করেছিল স্থানীয় ও দলীয় বিভিন্ন সূত্র। আজ নতুন করে মোহাম্মদ নিশান নামে এক অস্ত্রধারীর পরিচয় পাওয়া গেছে। তিনি আকতার হোসেনের অনুসারী। এ ছাড়া ইতিমধ্যে পরিচয় শনাক্ত হওয়া মো. কায়েস নৌকার প্রার্থী আকতার হোসেনের ভাই।

অস্ত্রধারীদের ফেসবুক থেকে একটু ঘুরে আসা যাক। নির্বাচনের আগে থেকেই তাঁরা নিজেদের ফেসবুকে ভোটের দিন মাঠ গরম করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

নতুন করে পরিচয় নিশ্চিত হওয়া মো. নিশান ফেসবুকে নিজেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সাতকানিয়া থানার কর্মী হিসেবে পরিচয় দেন। নির্বাচনের আগের দিন রোববার রাত ১১টা ৫২ মিনিটে ফেসবুকে একটি পোস্ট তিনি লেখেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ দলের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দিলাম, বেঁচে থাকলে আবারও দেখা হবে রাজপথে।

পরদিন সকালে অস্ত্র হাতে তিনি নেমে পড়েন। এর আগে নিশান ৫ জানুয়ারি প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ জানান একটি পোস্ট দিয়ে। হাসি ও ভি চিহ্নের ইমোজি দিয়ে তিনি লেখেন, ‘আমাকে নাকি ভোট সেন্টারে পেলে ডাইরেক্ট গুলি করবে, ভাইজান, আমারা কিন্তু পুরান খেলোয়াড় মনে রাখবা...ইনশা আল্লাহ দেখা হচ্ছে ভোটের মাঠে।’

এরপর নিশান নির্বাচন শেষে সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে আকতার হোসেনের সঙ্গে ফুলের মালাবদলের ছবি দিয়েছেন ফেসবুকে। আকতার হোসেন নির্বাচনে ১ হাজার ৮৬০ ভোটে জসিমের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। দুটি কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। ভোটের ব্যবধান বেশি হওয়ায় সন্ধ্যায় বিজয়োল্লাস করে ফেলেন আকতার অনুসারীরা।

এরপর ৬টা ৪২ মিনিটে স্বতন্ত্র প্রার্থী জসিম উদ্দিনকে ইঙ্গিত করে নিশান লেখেন, কই গেল খাগরিয়ার সিংহ পুরুষ, আসো, এবার খেলা হবে।

হেলমেট পরিহিত অবস্থায় বন্দুক হাতে গুলি করছিলেন কামরুল আলম আজাদ ওরফে সুমন। নৌকার প্রার্থী আকতার হোসেনের অনুসারী কামরুল ফেসবুকে নিজেকে উত্তর সাতকানিয়া আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের উপ-অর্থ সম্পাদক পরিচয় দেন। ইংরেজিতে মো. কে এ সুমন নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট চালান তিনি। কভার ফটো হিসেবে রয়েছে আকতার হোসেনের ফুলের মালা পরিহিত ছবি।

এটা নির্বাচনে এগিয়ে থাকার পর ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর ছবি। আকতার হোসেনের পক্ষে প্রচারণার একাধিক ভিডিও ও ছবি রয়েছে তাঁর ফেসবুকে।

কামরুল আলম আজাদ ওরফে সুমন। অস্ত্র হাতে নামেন নৌকার প্রার্থীর পক্ষে
প্রথম আলো

২৪ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে ফেসবুকে দুটি পোস্ট দেন কামরুল আলম আজাদ। ২টা ২৩ মিনিটে দেওয়া পোস্টে তিনি লেখেন, ‘পাগলের পাগলামি দেখে ছাগলগুলো নাচতেছে, তা দেখে আমার খুব ভালো লাগতেছে...রাখে আল্লাহ মারে কে, মাকে বলে দিয়েছি। মা, আমাকে দোয়া করে দিয়ে আল্লাহর হাতে গছিয়ে দিয়েছে, ফি-আমানিল্লাহ।’

এরপর ৩টা ১২ মিনিটে দেওয়া পোস্টে তিনি নীতিকথা লিখেছেন। ‘হুমকি কিংবা হামলা করে নয় বরং ভালোবাসা দিয়ে ভোটারদের মন জয় করুন, জনগণই সবচেয়ে বড় শক্তি । মনে রাখবেন, যেখানেই জনগণের অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে, সেখানেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিরোধ করেছিলেন। ফ্যাক্ট: সাতকানিয়া ইউপি নির্বাচন!’

মো. কায়েসও নৌকার প্রার্থীর অনুসারী
ছবি: প্রথম আলো

মো. কায়েস ফেসবুকে নিজের ইংরেজি নামের পাশে ব্র্যাকেট দিয়ে লিখেছেন (রূপকথার রাজকুমার)। উত্তর সাতকানিয়া স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন তিনি। আকতার হোসেনের সঙ্গে তাঁর একাধিক ছবি ও ভিডিও রয়েছে।

ভোটের আগে প্রতিপক্ষকে হুমকি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন কায়েস

২৬ জানুয়ারি কায়েস ফেসবুকে হুমকি দিয়ে লিখেছেন, ‘ফেসবুকে গলাবাজি না করে সামনাসামনি বাজারে আয় খেলা হবে। আলা পল (পাগল)।’ এই পোস্টটি তিনি ৪০ জনকে ট্যাগ করেছেন। তারও আগে ১৬ জানুয়ারি পোস্ট দেন এভাবে, ‘গলাবাজি করলে একটা মারও মাটিতে পড়বে না।’ ২৯ জানুয়ারি আরেক পোস্টে লেখেন, ‘আলা পল (হালা পাগল) আমার নামও জানে না জসিম চেয়ারম্যান।’

মো. এজাহার। নৌকার প্রার্থী আকতার হোসেনের পক্ষে অস্ত্র নিয়ে ছুটছেন
ছবি: প্রথম আলো

আকতার হোসেনের কর্মচারী নাছির উদ্দিনের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পাওয়া গেলেও সেখানে ঢোকা যায়নি। সেখানে একটি ছোট শিশুর ছবি প্রোফাইল পিকচার হিসেবে রয়েছে।

আকতারের অনুসারী আর যাঁদের হাতে অস্ত্র ছিল, তাঁরা হলেন শওকত ওরফে শাখাওয়াত ও এজাহার।

মো. আবছার। স্বতন্ত্র প্রার্থী জসিম উদ্দিনের সমর্থক
ছবি: প্রথম আলো

জসিমের অনুসারী অস্ত্রধারী আবছারের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করা যায়নি।

অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সাতকানিয়া থানার পরিদর্শক তদন্ত সুজন কুমার দে।