চার জেলায় দুই নারীসহ চারজন খুন
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় গতকাল বৃহস্পতিবার এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর আগে বুধবার রাতে বরগুনার পাথরঘাটায় এক বৃদ্ধ নারীকে গলা কেটে ও কিশোরগঞ্জের নিকলীতে আরেক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। বুধবারই ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে এক নারী খুন হয়েছেন।
হরিণাকুণ্ডুতে নিহত যুবকের নাম আনোয়ার হোসেন ওরফে আনু (৪০)। তিনি উপজেলার ভালকী গ্রামের জবেদ আলী মণ্ডলের ছেলে। পাথরঘাটায় নিহত বৃদ্ধার নাম লালবরু (৭২)। তিনি উপজেলার হাঁড়িটানা গ্রামের মৃত নাগর আলী হাওলাদারের স্ত্রী। নিকলীতে নিহত যুবক হলেন লোকমান হোসেন (৪০)। তাঁর বাড়ি উপজেলার পূর্ব নয়াহাটি গ্রামে। বোয়ালমারীতে নিহত নারীর নাম আসমা বেগম (৩২)।
প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
ঝিনাইদহ: পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, আনোয়ার হোসেন পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ছিলেন। বুধবার সন্ধ্যার পর তিনি নিখোঁজ হন। গতকাল দুপুরে কেচমত-ঘোড়াগাছার মাঠে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। কে বা কারা তাঁকে হাত-পা বেঁধে গলা কেটে হত্যার পর সেখানে লাশ ফেলে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। আনোয়ারের নামে হরিণাকুণ্ডু থানায় হত্যাসহ চারটি মামলা রয়েছে।
হরিণাকুণ্ডু থানার ওসি মাহাতাব উদ্দিন বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
পাথরঘাটা (বরগুনা): জেলার পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মো. জিয়াউর রহমান বলেন, বুধবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে লালবরুকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। সে সময় ওই ঘরে থাকা নারীদের চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা জড়ো হলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পরে গতকাল সকালে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, বেড়ার টিন খুলে দুর্বৃত্তরা ঘরে ঢোকে। নিহত লালবরুর নাতি পাথরঘাটা মহাবিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্র মাসুদ হাওলাদার বলে, ‘স্থানীয় কয়েকজন মানুষ ও একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে আমাদের বিরোধ চলছিল। কয়েক দিন ধরে আমাদের মামলার ভয়ও দেখানো হচ্ছিল। এ ভয়ে আমি ও আমার বাবা ইউনুছ আলী বাড়িতে ছিলাম না। এ সুযোগে দুর্বৃত্তরা এ কাজ করে থাকতে পারে।’
ইউপি চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বুধবার সন্ধ্যায় পরিষদে সালিস বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে আমার ব্যস্ততার কারণে বৈঠকটি হয়নি। জমির গাছ কাটা নিয়ে বিরোধের ঘটনায় বৈঠকটি ডাকা হয়েছিল।’
থানার ওসি এস এম জিয়াউল হক গতকাল বিকেলে বলেন, এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
নিকলী (কিশোরগঞ্জ): পুলিশ ও নিহত ব্যক্তির পরিবার সূত্র জানায়, নিকলীর দামপাড়া পূর্ব নয়াহাটি গ্রামের ফিরোজ মিয়া ও একই গ্রামের আমির আলীর মধ্যে জমির সীমানা নিয়ে মামলা-মোকদ্দমাসহ বিরোধ ছিল। বুধবার রাত নয়টায় আমির আলীর ছেলে লোকমান হোসেন ঘর থেকে বের হয়ে বাজারের দিকে যান। এরপর তিনি আর ফেরেননি। গতকাল সকালে একটি বেগুনখেতে লোকমানের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
নিকলী থানার ওসি মকবুল হোসেন মোল্লা গতকাল দুপুরে বলেন, নিহতের শরীরে ধারালো অস্ত্রের ১৬টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাঁর পরিবারের লোকজনের সন্দেহের ভিত্তিতে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।
ফরিদপুর: বোয়ালমারীতে নিহত আসমা বেগম উপজেলার ময়না ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামের জিয়া মোল্লার স্ত্রী এবং দুই সন্তানের মা। উজ্জ্বল শেখ (২২) একই ইউনিয়নের খরসূতি গ্রামের কুদ্দুস শেখের ছেলে।
ময়না ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান নাসির মো. সেলিম বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় উজ্জ্বল শেখ বোন আসমার বাড়িতে গিয়ে একসঙ্গে রাতের খাবার খান। পরে আসমার স্বামী জিয়া পাশের গোহাইলবাড়ি বাজারে যান। রাত সাড়ে আটটার দিকে তিনি বাড়িতে ফিরে তাঁর স্ত্রীকে ঘরের মধ্যে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে তাঁকে দ্রুত বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক আসমাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ হাসপাতাল থেকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফরিদউদ্দিন মিয়া জানান, আসমার মাথায় ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।
বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, ‘উজ্জ্বল শেখ মানসিক ভারসাম্যহীন বলে জানতে পেরেছি। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে। ঘটনার পর থেকে উজ্জ্বল শেখ পলাতক রয়েছেন।’