সীতাকুণ্ডে গাড়িচালক খুন
চালক খুনে ‘নেতৃত্ব’ দেন যুবলীগ নেতার অনুসারী
‘হাতে টাকা নেই’, তাই গরু ডাকাতির পরিকল্পনা করেন বলে জবানবন্দিতে জানান দুই আসামি।
চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ডে গরু লুট করতে না পেরে ট্রাকচালককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ‘নেতৃত্ব’ দেন এক যুবলীগ নেতার অনুসারী। সঙ্গে ছিলেন ওই নেতার বাগানের কর্মচারীরাও। ঘটনার পর তাঁরা নেতাকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানান। গ্রেপ্তার দুই আসামির আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এসব তথ্য উঠে আসে।
ওই যুবলীগ নেতার নাম এস এম আল নোমান। তিনি সীতাকুণ্ড উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি। সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি এস এম আল মামুনের ছোট ভাই এবং সীতাকুণ্ডের প্রয়াত সাংসদ এ বি এম আবুল কাশেম মাস্টারের ছোট ছেলে তিনি।
পুলিশ সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে মো. তুহিন ও লিটন তালুকদার গত রোববার চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদা ইয়াসমিনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আসামিদের জবানবন্দিতে উঠে আসে, ডাকাতির পরিকল্পনা করেন মো. নাদিম, নেতৃত্বও দেন তিনি। নাদিম যুবলীগ নেতা নোমানের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ (অনুসারী)। লিটন ও তুহিন নোমানের বাগানের কর্মচারী। এর আগে রবিউল হোসেন নামের আরেক আসামি গত শুক্রবার জবানবন্দি দেন। সেখানে নাদিমসহ যাঁরা ডাকাতিতে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের ব্যাপারে বিস্তারিত বলেন তিনি।
সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশরাফুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে। এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন নাদিমসহ সাত আসামি। তাঁদের মধ্যে তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ঘটনায় জড়িত বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তবে তাঁরা কার লোক, এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি এই পুলিশ কর্মকর্তা।
১৬ জুলাই ভোররাত ৪টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট-বায়েজিদ বোস্তামী সংযোগ সড়কের ৪ নম্বর সেতুর কাছাকাছি স্থানে গরুবাহী একটি ট্রাকের চালক আবদুর রহমানকে (৫০) গুলি করে হত্যা করে ডাকাতেরা। এ ঘটনায় আবদুর রহমানের শ্যালক আবদুল গণি ওই দিনই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে সীতাকুণ্ড থানায় হত্যা মামলা করেন।
পুলিশ জানায়, ২২ জুলাই থেকে গত শনিবারের মধ্যে ছয় আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। সর্বশেষ গত রোববার গ্রেপ্তার করা হয় মো. আলমগীর নামের আরেকজনকে। সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে নাদিম ও মানিককে ছয় দিন করে এবং সাদ্দাম ও আলমগীরকে তিন দিন করে রিমান্ডে আনা হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
অনুসারী ও কর্মচারীর ডাকাতিতে অংশ নেওয়া ও জবানবন্দির বিষয়ে জানতে সীতাকুণ্ড উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি এস এম আল নোমানের ব্যবহৃত তিনটি মুঠোফোনে কল করা হলে সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহানকে কল করা হলে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি।
নোমানের বড় ভাই ও উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি এস এম আল মামুনের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাড়তি পয়সার জন্য কারও দারোয়ান ডাকাতি করলে মালিক দায়ভার কেন নেবে? নোমানের সেকেন্ড ইন কমান্ড নাদিমকে আমি চিনি না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জবানবন্দিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যে কেউ যে কারও নাম জড়িয়ে দিতে পারে।
আদালত সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে মো. তুহিন বলেন, ‘আমি নোমান সাহেবের জায়গার দারোয়ান। আমার বস নাদিম। তিনি নোমান সাহেবের লোক। ঘটনার দিন বেলা তিনটার দিকে লিটন, ভুট্টু, বাঁচা, আলমগীর, কাজল ও নাদিম বৈঠক করেন। সেখানে টাকার জন্য রাতে ডাকাতির সিদ্ধান্ত হয়। কাজল ট্রাকচালককে গুলি করেন।’
লিটন তালুকদার তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, ‘আমার কাজ হলো এস এম আল নোমানের বাগানের সাইনবোর্ড সকালে লাগানো আর বিকেলে খোলা। দখল করা জায়গা পাহারা দেওয়া। ঘটনার দিন বিকেলে নোমানের সেকেন্ড ইন কমান্ড নাদিম তাঁর সহযোগীদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে কথা হয়, ঈদ এসে গেছে, কারও হাতে টাকা নেই, তাই গরু ডাকাতি করতে হবে। ডাকাতির ঘটনার পরদিন মুঠোফোনে নোমান সাহেবকে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিলে তিনি বলেন, “আমি দেখছি।”’
মামলার বাদী ও নিহতের শ্যালক আবদুল গণি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। ডাকাতেরা যত শক্তিশালীই হোক, তাঁদের বিচার যেন হয়।’