রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন চিকিৎসককে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে থানায় আটকে রেখে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে নগরের রাজপাড়া থানার দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় ওই চিকিৎসক গতকাল বুধবার রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. শামসুদ্দিনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
চিকিৎসকের লিখিত অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে মো. শামসুদ্দিন বলেন, বিষয়টি তদন্তের জন্য মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (সদর) গোলাম সাকলায়েনকে দায়িত্ব দিয়ে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেন, ২০ অক্টোবর দুপুরে বোয়ালিয়া থানাধীন ব্যক্তিগত চেম্বারে ছিলেন তিনি। এ সময় দুজন নারী সেখানে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিয়ে কাপড় খুলতে থাকেন। তখনই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হয়। তিনি দরজা খুলে দিলে দুজন লোক ভেতরে প্রবেশ করে নিজেদের পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে চিকিৎসককে গালিগালাজ করতে থাকেন এবং ওই দুই নারীকে বাইরে পাঠিয়ে দেন। পুলিশ পরিচয় দেওয়া দুজন চিকিৎসককে তাঁদের সঙ্গে যেতে বললে তিনি আপত্তি জানান। তখন তাঁরা চিকিৎসককে মারধর করে এবং অস্ত্র বের করে মেরে ফেলার হুমকি দেন। চিকিৎসক নিজেকে প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে আইনানুযায়ী আটকের আগে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে বললে তাঁরা বলেন, ‘আমরা যা বলব, সেটাই আইন।’
পুলিশ পরিচয় দেওয়া দুজন চিকিৎসককে একটি মোটরসাইকেলে বসিয়ে তাঁকে রাজপাড়া থানায় নিয়ে যান। স্থানীয় ৩০ থেকে ৩৫ জন লোক ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী।
থানায় গিয়ে ওই চিকিৎসক জানতে পারেন আটককারী দুজন হচ্ছেন রাজপাড়া থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মজনু মিঞা ও পুলিশ কনস্টেবল জাহিদ। রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুর রহমানের উপস্থিতিতে তাঁদের একজন চিকিৎসককে গালাগালি করেন এবং মুক্তির জন্য ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন, না হলে হত্যার হুমকি দেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসীর মাধ্যমে খবর পেয়ে থানায় উপস্থিত হন চিকিৎসকের স্ত্রী। তাঁর পরিচিতজনেরাও থানায় উপস্থিত হলে ওসি মাহমুদুর রহমান চিকিৎসককে ছেড়ে দেন।
রাজশাহী মহানগরের সাবেক মেয়র ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই রাতেই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে পুরো ঘটনা খুলে বলেন। তখনই তিনি রাজপাড়া থানার ওসিকে ফোন করে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চান। ওসি মাহমুদুর রহমান তাঁকে বলেছেন, ভুল-বোঝাবুঝিতে এই ঘটনা ঘটেছে। জাহিদ নামের একজন পুলিশ কনস্টেবল মোটরসাইকেলে করে মেয়ে দুটিকে চিকিৎসকের চেম্বারে পৌঁছে দিয়েছিল। ওই কনস্টেবলকে থানায় আটক রাখা হয়েছে।
তবে রাজপাড়া থানায় যোগাযোগ করা হলে কর্তব্যরত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মোশাররফ হোসেন বলেন, ওসি মাহমুদুর রহমান এবং কনস্টেবল জাহিদ ছুটি আছেন।
যোগাযোগ করা হলে এএসআই মজনু মিঞা চিকিৎসককে আটকের কথা স্বীকার করে বলেন, ওই চিকিৎসক ইয়াবা সেবন করেন। নেশাখোর লোক মিথ্যা অভিযোগ দিতেই পারে।