চুরির উদ্দেশ্যে ইউএনওর ওপর হামলা, র‌্যাবকে বলেছেন আটক আসাদুল

ইউএনও ওয়াহিদা খানম রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে চিকিৎসাধীন
ফাইল ছবি

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তাঁর বাবা ওমর আলীর ওপর হামলার ঘটনায় আটক তিনজন র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হামলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। ‘চুরির অভিপ্রায়’ থেকেই নৃশংস এই হামলার ঘটনা ঘটে বলেও তারা র‌্যাবকে জানিয়েছে।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় রংপুর নগরের র‌্যাব-১৩ এর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান র‌্যাব-১৩ এর অধিনায়ক কমান্ডার রেজা আহমেদ ফেরদৌস।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয়জনকে আটক করেছিল র‌্যাব। এদের মধ্যে আসাদুল ইসলাম, নবীরুল ইসলাম ও সান্টু কুমারের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। আসাদুলের দাবি অনুয়ায়ী এটি একটি চুরির ঘটনা। প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য আরও সময় দিতে হবে, আরও তদন্ত করতে হবে, প্রয়োজনে সম্পৃক্তদের রিমান্ডে নিতে হবে।

আসাদুল ইসলাম (৩৫) ওসমানপুর সাগরপাড়া এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে। তিনি উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। র‌্যাব-১৩ অধিনায়ক সাংবাদিকদের বলেছেন, আসাদুল জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন নবীরুল এই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী। তাঁকে ঘোড়াঘাট উপজেলা সংলগ্ন চক বামনদিয়া বিশ্বনাথপুর গ্রাম থেকে আটক করা হয়। নবীরুল ও সান্টু কুমার দুজনেই পেশায় রংমিস্ত্রি। আসাদুল ও নবীরুলের বিরুদ্ধে ঘোড়াঘাট থানায় চুরি মাদকের একাধিক মামলা রয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজে লাল টিশার্ট পড়ে হালকা-পাতলা গড়নের যে ব্যক্তিকে দেখা গিয়েছিল তিনিই নবীরুল। জিজ্ঞাসাবাদে নবীরুল এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীরের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আনা হয়েছিল। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বাড়ি গেছেন। তবে প্রয়োজনে আবারও যে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হতে পারে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব কর্মকর্তা রেজা আহমেদ ফেরদৌস বলেন, তাঁরা ইউএনওর বাসায় হামলার ঘটনার ছায়া তদন্ত করছেন। এখানে কারও রাজনৈতিক পরিচয় তাঁদের বিবেচনার বিষয় নয়।

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে র‌্যাবের ব্রিফিং। শুক্রবার সন্ধ্যায় রংপুর নগরের র‌্যাব–১৩ কার্যালয়ে।
প্রথম আলো

হামলার কারণ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব-১৩ অধিনায়ক বলেন, তাঁদের সফলতা হলো প্রধান আসামিকে আটক করতে পেরেছেন। সন্দেহজনকভাবে তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। আসাদুল দাবি করেছে চুরির অভিপ্রায় থেকে ঘটেছে। প্রকৃত ঘটনা আরও থাকাতে পারে, এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়, সময়সাপেক্ষ। তবে আসাদুলের দাবি অনুযায়ী মূল পরিকল্পনা নবীরুল।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বিরামপুর, হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট থানার পুলিশের একটি দল শুক্রবার ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে হাকিমপুর উপজেলার কালীগঞ্জ এলাকায় বোনের বাসা থেকে আটক করে আসাদুলকে। তাঁকে রংপুর রেঞ্জের অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যদিকে দিনাজপুরের র‍্যাবের সদস্যরা জাহাঙ্গীর হোসেনকে তাঁর নিজ বাসা থেকে আটক করেন।

র‌্যাবের সংবাদ সম্মেলন শেষে গ্রেপ্তার নবীরুল ইসলাম (নীল জামা) ও সান্টু চন্দ্র রায়কে সাংবাদিকদের সামনে নিয়ে আসা হয়
ছবি: প্রথম আলো

জাহাঙ্গীর ২০১৭ সাল থেকে ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। শুক্রবার বিকেলে তাঁকে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। আসাদুল উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তাঁকেও সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পরে জাহাঙ্গীরকে ছেড়ে দিলেও আসাদুলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার মধ্যরাতে ঘোড়াঘাটের ইউএনওর সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর কেটে দুর্বৃত্তরা তাঁর শয়নকক্ষে ঢুকে পড়েন। এর আগে দুর্বৃত্তরা ওই বাসভবনের নিরাপত্তা প্রহরীকে বেঁধে প্রহরীকক্ষে তালা দিয়ে আটকে রাখেন। ইউএনওর বাবা ওমর আলী (৬০) প্রতিদিন সকালে হাঁটতে বের হন। কিন্তু গতকাল সকালে তিনি হাঁটতে বের না হওয়ায় সঙ্গীরা তাঁর খোঁজ নেওয়ার জন্য বাসভবনে যান। অনেক ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে তাঁরা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ গিয়ে ইউএনও, তাঁর বাবা ও প্রহরীকে উদ্ধার করেন।

আহত বাবা-মেয়েকে গতকাল সকালে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে ওয়াহিদাকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হয়। তিনি এখন ঢাকার আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে চিকিৎসাধীন। ওয়াহিদার বাবা রংপুর মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।