
চট্টগ্রামের হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে গতকাল শনিবার দুপুরে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত আটজন আহত হয়েছেন। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারীদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
বেলা আড়াইটায় দ্বিতীয় দফায় সংঘর্ষের সময় কলেজের পাশের তিনটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভয়ে তাদের অনেককে ছোটাছুটি করতে দেখা যায়। এ সময় মহসিন কলেজের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আশপাশের দোকানগুলোও বন্ধ করে দেন দোকানিরা। মহসিন কলেজের পাশেই হাজী মুহাম্মদ মহসিন উচ্চবিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয় এবং মহসিন কলেজের বিপরীত দিকে চট্টগ্রাম কলেজ ও কাজেম আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
সংঘর্ষের সময় দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের হাতে লাঠিসোঁটাসহ ধারালো অস্ত্র ছিল। আহত আটজনের মধ্যে একজনকে ছুরিকাঘাত করা হয়। তাঁর নাম সাইফুল ইসলাম। অন্যরা ইটের আঘাত পেয়েছেন।
এর আগে গত ১১ ও ১২ জুলাই চট্টগ্রাম কলেজে মেয়র নাছির অনুসারী দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি ও সংঘর্ষ হয়। এর মধ্যে ১২ জুলাই এক যুবককে অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষকে ধাওয়া করতে দেখা যায়। সেই যুবকের পরিচয় এখনো শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। ফলে তাঁকে গ্রেপ্তারও করা যায়নি।
ছাত্রলীগ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, গতকাল দুপুর ১২টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। এরপর আ জ ম নাছিরের অনুসারীরা ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে কলেজের পাশের এলাকা চকবাজারে যান। সেখান থেকে মিছিলটি ঘুরে আবার ক্যাম্পাসে ঢুকতে চাইলে বাধা দেন মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা। তখনই দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। পরে পুলিশ এসে দুই পক্ষকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়। এ সময় মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা চকবাজারের দেব পাহাড় এলাকায় এবং নাছিরের অনুসারীরা কলেজের আরেক পাশে গণি বেকারির দিকে অবস্থান নেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, বেলা আড়াইটার দিকে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা গণি বেকারির দিকে আসতে চাইলে উভয় পক্ষের মধ্যে আবারও সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় দুই পক্ষ পরস্পরের দিকে পাথর ছুড়তে থাকে। এতে অন্তত আটজন আহত হন। সংঘর্ষের সময় কয়েকজনকে ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করতে দেখা যায়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীরা হলেন গণিতের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মায়মুন উদ্দিন, স্নাতক (পাস) তৃতীয় বর্ষের আনোয়ার পলাশ, ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের মো. জিশান, অর্থনীতি প্রথম বর্ষের হানিফ সুমন ও ইংরেজি প্রথম বর্ষের ছিদ্দিক সোহান। তাঁরা নগরের মেহেদীবাগ এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আ জ ম নাছিরের অনুসারীদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম, আকমাম বাপ্পী ও মো. হাসান আহত হন। তাঁদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী মায়মুন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, নাছির গ্রুপের ছেলেরা ক্যাম্পাসে একক নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। এ জন্য তাঁরা পরিকল্পিতভাবে বহিরাগতদের নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা করেছে।
তবে বহিরাগতদের নিয়ে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আ জ ম নাছিরের অনুসারী এনাম হোসেন চৌধুরী। তিনি অভিযোগ করেন, মহিউদ্দিনের অনুসারীরাই একবার কলেজ ক্যাম্পাসে এবং পরে গণি বেকারি এলাকায় তাঁদের ওপর হামলা করেছে। এ ঘটনায় মামলা করা হবে বলে জানান তিনি।
চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল হুদা বলেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের আটক করা হবে।