রাজধানীর বিমানবন্দর থানার কাওলায় ১১ মাস আগে হওয়া একটি ডাকাতির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) জানতে পারে ওই ডাকাতির ঘটনায় সিআইডির একজন উপপরিদর্শক (এসআই) জড়িত।
বুধবার সকালে ডিবি পুলিশের একটি দল গোপন খবরের ভিত্তিতে রংপুরের মিঠাপুকুর থানার শঠিবাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে সিআইডির ওই এসআই আকসাদুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে। তিনি ভারতে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ নিয়ে ওই ডাকাতির ঘটনায় ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
তবে এর আগে ছড়িয়ে পড়া একটি অডিওতে এক নারী ও এক পুরুষের কথোপকথনে ১ কোটি টাকার বেশি লেনদেনের কথা শোনা যায়। সিআইডির এসআই আকসাদুজ্জামানের দাবি, এটা তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে মামলার তদন্ত তদারকি ডিবি কর্মকর্তা কায়সার রিজভী কোরায়েশির কথোপকথন।
এ বিষয়ে ডিবি (উত্তরা-এডিসি) অতিরিক্ত উপকমিশনার কায়সার রিজভী কোরায়েশি তাঁর বিরুদ্ধে করা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ওই কথোপকথন তাঁর নয়।
অডিওতে কথোপকথনের পুরুষ ব্যক্তিটি নামও বলেননি। ওই অডিও একটি সাজানো নাটক। ডাকাতির মামলা থেকে রক্ষা পেতে তদবিরে ব্যর্থ হয়ে এই নাটক সাজান এসআই আকসাদুজ্জামান। ডিবির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এসআই আকসাদুজ্জামানকে গত ১৮ আগস্ট সাময়িক বরখাস্ত করেছে সিআইডি কর্তৃপক্ষ।
ডাকাতির ঘটনায় ধরা পড়া চাকরিচ্যুত সেনা সদস্য হাসান রাজার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও আকসাদুজ্জামানের নাম আসে। হাসান রাজা এও বলেন, ডাকাতির পর আকসাদুজ্জামান তাঁকে ৭০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন।
ডিবির ওই কর্মকর্তা জানান, রংপুরের সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় বুধবার বরখাস্ত আকসাদুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। বুধবার রাতে তাঁকে ডিএমপির ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।
ডিবি সূত্র জানায়, গত বছরের ১৯ অক্টোবর সকালে বিমানবন্দর সড়কের কাওলায় দুবাই প্রবাসী রোমান মিয়া ও তার ফুপাতো ভাই মনির হোসেনকে ডিবি পরিচয়ে মাইক্রোবাস তুলে নেওয়া হয়। পরে তাঁদের মারধর করে সঙ্গে থাকা মার্কিন ডলার, দিরহাম, মুঠোফোন ও কাপড়ভর্তি লাগেজসহ ৪ লাখ ৭৮ হাজার টাকার মালামাল ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ওই ঘটনায় করা মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় ডিবি।
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবির এডিসি কায়সার রিজভী কোরায়েশি বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, মামলার তদন্তভার পেয়ে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা ও প্রযুক্তির সহায়তায় প্রথমে মাইক্রোবাসটি শনাক্ত করা হয়। এরপরই পুরো চক্রের আট সদস্যকে শনাক্ত করা হয়। বেরিয়ে আসে সিআইডির এসআই আকসাদুজ্জামানের জড়িত থাকার তথ্য। এসআই আকসাদুজ্জামানের আগে ডাকাতির ঘটনায় আরও ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন, সিআইডির রাইটার মোশাররফ হোসেন, চাকরিচ্যুত সেনা সদস্য হাসান রাজা, সেলিম মোল্লা, রিপন মোড়ল, আমির হোসেন তালুকদার, রিজু মিয়া সিকদার। ডাকাতিতে জড়িত বাকি আরেকজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিআইডির গাড়িচালক হারুন অর রশীদ (সজীব) ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি তখন চালাচ্ছিলেন। তিনি সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালতকে তিনি বলেছেন, ১৯ অক্টোবর রাতে এসআই আকসাদুজ্জামান তাঁকে ফোন করে বলেন, ভোরবেলায় ‘অপারেশন’ আছে, প্রস্তুত থাকতে। এরপর ভোর ৫টায় তিনি গাড়ি নিয়ে বের হন। আকসাদুজ্জামানকে নেওয়ার পর মালিবাগের সিআইডি দপ্তর থেকে মোশাররফ হোসেনকে তুলে নেন তিনি। এরপর বিভিন্ন জায়গা থেকে বাকিদের মাইক্রোতে নিয়ে টিকাটুলিতে গিয়ে আধা ঘণ্টা অপেক্ষার পর একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে অনুসরণ করেন তাঁরা। অটোরিকশাটি কাওলায় পৌঁছানোর পর দুবাইপ্রবাসী রোমান মিয়া ও তার ফুপাতো ভাই মনির হোসেনের কাছ থেকে অর্থসহ অন্যান্য মালামাল ছিনিয়ে নেন।
এর আগে ডিবির এক কর্মকর্তাকে এক কোটি ৪২ লাখ ঘুষ টাকা দেওয়া হয়েছে, এমন একটি কথোপকথনের অডিও ছড়িয়ে পড়ে। অডিওতে এক নারী বলছেন, ‘এক কোটি ২৮ লাখ তো নিছেন আপনারা সবাই। আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে ১৪ লাখ দিছি না?’ অপর প্রান্তে থাকা পুরুষকণ্ঠও টাকা কোনো এক স্যারকে দেওয়ার কথা বলছেন। পরে জানা যায়, নারীকণ্ঠটি এসআই আকসাদুজ্জামনের স্ত্রী তাহমিনা আক্তারের। তাহমিনার দাবি, অপর প্রান্তের কণ্ঠটি ডিবির উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কায়সার রিজভী কোরায়েশির। অবশ্য ডিবির এই কর্মকর্তা বলেছেন, অডিওটি বানোয়াট, কণ্ঠ তাঁর নয়।