তদন্তে উঠে আসে না উৎস, পৃষ্ঠপোষকদের নাম

৫৫টি মাদক মামলার অভিযোগপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বারবার রিমান্ডে নিয়েও নতুন তথ্য বের করতে পারেননি তদন্ত কর্মকর্তারা।

প্রতীকী ছবি

মাদক উদ্ধারের ঘটনায় ধরা পড়ছে শুধু এর বাহকেরা। মামলাও হচ্ছে শুধু বাহকদের বিরুদ্ধে। পরে তদন্তেও নতুন কোনো তথ্য উঠে আসছে না। এ কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন মাদক কারবারের মূল হোতা, অর্থের জোগানদাতা ও তাঁদের পৃষ্ঠপোষকেরা। মাদকের উৎসও বন্ধ করা যাচ্ছে না।

গত তিন বছরে (২০১৯ থেকে ২০২১ সাল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ১৭টি থানায় দায়ের করা ৫৩টি মামলা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ২টি—মোট ৫৫ মামলার এজাহার ও আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন

প্রাথমিকভাবে প্রতিটি ঘটনার পেছনে সংঘবদ্ধ চক্রের কথা বলেন সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা। গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে নতুন করে মাদক উদ্ধার, এর উৎস, অর্থের জোগানদাতা, মূল হোতা ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের নাম জানা যাবে, এমনটা বলে রিমান্ডে নেওয়া হয়। তবে মামলার তদন্ত আটকে থাকছে বাহককে গ্রেপ্তার ও গ্রেপ্তারের সময় তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার মাদকে। পরে আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রেও থাকছে শুধু বাহকের নাম।

বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে খবর বের হয়, মাদক কারবারের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জড়িত। হয়তো এ কারণেই মূল হোতাদের তথ্য সামনে আসছে না।
মনজিল মোরসেদ, আইনজীবী, সুপ্রিম কোর্ট

ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখন মাদক ব্যবসা চলে “কাটআউট” পদ্ধতিতে। তাই মামলার তদন্তে মাদকের উৎস, মূল হোতা ও অর্থের জোগানদাতাদের তথ্য পাওয়া যায় না। আমরা মাদকের “রুটে” যাওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে মাদকসহ যে বাহককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে, তার কাছ থেকে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না। এ কারণে অভিযোগপত্রও হয় শুধু বাহকদের বিরুদ্ধে।’

কাটআউট পদ্ধতি বলতে বোঝায়, কোনো বাহক যাঁর কাছে থেকে মাদকের চালান নেন এবং যাঁর কাছে পৌঁছে দেন, তাঁরা দুজনই তাঁর কাছে অপরিচিত।

উপরিউক্ত ৫৫টি মামলায় প্রায় ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এসব আসামিকে ২০০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। আদালত এসব আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৬৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলাগুলোর অভিযোগপত্রের তথ্য বলছে, এসব মামলায় নতুন করে কোনো আসামি গ্রেপ্তার করতে পারেননি তদন্তকারী কর্মকর্তারা। পরে কোনো মাদকদ্রব্যও উদ্ধার হয়নি। তিনটি মামলার ক্ষেত্রে আসামিদের দেওয়া ঠিকানায় গিয়ে তাঁদের পাওয়া যায়নি।

মাদক মামলার তদন্তে যুক্ত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, রিমান্ডের তথ্য নিয়ে অনেক সময় বাণিজ্য হয়। আবার অনেক সময় গ্রেপ্তার আসামিদের তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে নতুন মামলা দেওয়া হয়। এতে ওই কর্মকর্তার ব্যক্তিগত অর্জন বাড়ে। তবে সার্বিকভাবে মামলার তদন্ত নষ্ট হয়।

রাজধানীতে গড়ে প্রতি মাসে মাদকসংক্রান্ত মামলা হয় দেড় হাজার। তবে বেশির ভাগ মামলার তদন্তে মাদকের উৎস জানা যায় না। এ পটভূমিতে ২০২০ সালের শেষের দিকে শুধু সরবরাহকারী বা খুচরা বিক্রেতা নয়, মামলার তদন্তে মাদকের উৎস খুঁজে বের করার নির্দেশনা দেয় ডিএমপি।

জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে খবর বের হয়, মাদক কারবারের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জড়িত। হয়তো এ কারণেই মূল হোতাদের তথ্য সামনে আসছে না।’ তিনি বলেন, ৫৫টি মামলার ক্ষেত্রে একটিতেও মাদকের উৎস ও কারবারির তথ্য বের করতে পারা যাবে না, সেটা রহস্যজনক।