ধানমন্ডিতে জোড়া খুনে তত্ত্বাবধায়ক ও গৃহকর্মী: পিবিআই
দীর্ঘ দশ বছর ধরে আফরোজা বেগমের বাড়ি তত্ত্বাবধান করে বিশ্বস্ততা অর্জন করেন বাচ্চু মিয়া। অর্থ সম্পদের লোভে উচ্চাকাঙ্ক্ষী হয়ে আফরোজা বেগমের বাসায় চুরির পরিকল্পনা করেন তিনি। গৃহপরিচারিকাকে নিয়ে বাসা থেকে স্বর্ণালংকার লুট করতে গেলে তাকে বাধা দেন আফরোজা বেগম ও আরেক গৃহপরিচারিকা। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে দুজনকেই ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন তাঁরা। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ধানমন্ডি ২৮ নম্বর সড়কের লোবেলিয়া অ্যাপার্টমেন্টে এই ঘটনা ঘটে।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন পিবিআইয়ের অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের (উত্তর) পুলিশ সুপার আহসান হাবীব। পিবিআই বলেছে, বাচ্চু মিয়া ও তাঁর সহযোগী গৃহপরিচারিকা সুরভী আক্তারকে ইতিপূর্বে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের তথ্যের ভিত্তিতে উদ্ধার করা হয় লুট হওয়া একটি সোনার চেইন ও দুটি সোনার চুড়ি। প্রায় দুই বছর ধরে মামলার তদন্ত শেষ হওয়ার পর আজ বৃহস্পতিবার বাচ্চু ও সুরভীকে আসামি করে আদালতে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আহসান হাবীব বলেন, খুনের ঘটনার পরই আফরোজা বেগমের মেয়ে দিলরুবা সুলতানা ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন। ধানমন্ডি থানা ও ডিবি পুলিশ মামলার তদন্ত শুরু করে। ২৬ দিন তদন্ত করে তারা মূল দুই আসামি বাচ্চু মিয়া ও সুরভীসহ সন্দেহভাজন পাঁচজনকে আটক করে। হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন সুরভী। কিন্তু বাচ্চু মিয়া দোষ স্বীকার করেননি। পরে মামলার বাদীর নারাজি ও পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে পিবিআই ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর তদন্ত শুরু করে। গ্রেপ্তার সুরভী ও বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবারও রিমান্ডে নেয় পিবিআই। সুরভীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আগারগাঁওয়ে তাঁর ভাড়া বাসার মাটি খুঁড়ে একটি সোনার চেইন ও দুটি সোনার চুরি উদ্ধার করা হয়। এ সময় চুরি করা মুঠোফোনটি বিক্রির কথা স্বীকার করেন সুরভী।
হত্যাকাণ্ডের মোটিভ (উদ্দেশ্য) সম্পর্কে পিবিআইয়ের এই পুলিশ সুপার বলেন, বাচ্চু দীর্ঘ ১০ বছর ফ্ল্যাটের তত্ত্বাবধান করে আফরোজা বেগমের বিশ্বস্ততা অর্জন করেন। তবে বাচ্চুর মধ্যে বিলাসী জীবনযাপনের আকাঙ্ক্ষা ছিল। সেই আকাঙ্ক্ষা থেকে বাসার অর্থ-সম্পদের প্রতি লোভ জন্মায় তাঁর। ওই সময় একজন গৃহপরিচারিকা খুঁজছিলেন আফরোজা বেগমের মেয়ে দিলরুবা। সেই সুযোগটি কাজে লাগান বাচ্চু। এদিকে, সুরভী নামের এক নারী কাজের খোঁজে ধানমন্ডিতে এলে বাচ্চুর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। কাজ দেওয়ার কথা বলে বাচ্চু সুরভীকে নিয়ে আফরোজা বেগমের বাসা থেকে স্বর্ণালংকার চুরির পরিকল্পনা করেন। সেই অনুযায়ী সুরভীকে গৃহপরিচারিকা হিসেবে ওই বাসায় নিয়ে যান বাচ্চু। কাজ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর বাসার কিছু কাজও করে সে।
আহসান হাবীব বলেন, ঘটনার দিন বিকেল ৪টার দিকে বাচ্চু বাসায় ঢুকে আফরোজা বেগমের কাছে আলমারির চাবি চান। কিন্তু চাবি দিতে না চাইলে বাচ্চু ও সুরভী ছুরি দিয়ে আফরোজাকে আঘাত করেন। এরপর তাঁরা চাবি নিয়ে আলমারি খুলে সোনার চেইন, সোনার চুড়ি ও মুঠোফোন নিয়ে পালিয়ে যান। এ ঘটনা বাসার অপর গৃহপরিচারিকা দিতি দেখে ফেলায় তাঁকেও ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান সুরভী। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে আফরোজা বেগম ও দিতির মৃত্যু হয়।
এই হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি বাচ্চু মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। শুধু সুরভীর কথায় পিবিআই কীভাবে বাচ্চুকে দোষী মনে করছে জানতে চান সাংবাদিকেরা। এ সময় পুলিশ সুপার আহসান হাবীব বলেন, ভবনের একাধিক ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি), বাচ্চু ও সুরভীর সাক্ষাতের ভিডিও, মুঠোফোনে তাঁদের কথোপকথনের রেকর্ড বিশ্লেষণ করে স্পষ্ট হয়েছে বাচ্চু হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী।