কমলাপুরের এই পদচারী-সেতুতে বাজার বসানোর কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। ছবিটি গত বুধবার তোলা l প্রথম আলো
কমলাপুরের এই পদচারী-সেতুতে বাজার বসানোর কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের। ছবিটি গত বুধবার তোলা l প্রথম আলো

কমলাপুর রেলস্টশনসংলগ্ন পদচারী-সেতুটি রেলস্টেশন থেকে মুগদা বা সবুজবাগ যাওয়ার সবচেয়ে সহজ পথ। প্রতিদিন হাজারো পথচারী এই সেতু ব্যবহার করে। কিন্তু ব্যস্ত এই সেতুতে বসছে বাজার। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পথচারীদের।

গত বুধবার দেখা যায়, শাকসবজি, ডিম, মাছ, দা-বঁটি, ক্রোকারিজ সামগ্রী, মুদিপণ্য, ফল, ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, খেলনা, জুতা-মোজা, ছেলেমেয়েদের পোশাক, বেল্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের নিত্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে সেতুর ওপরে। কী নেই সেতুর ওপর বসা এই বাজারে! প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে মাঝরাত পর্যন্ত চলে বিকিকিনি।

পদচারী-সেতুটি দিয়ে রেলের যাত্রী, পথচারী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, বিভিন্ন অফিসগামী মানুষ যাতায়াত করে।

চাকরিজীবী মো. শওকত আলীকে গত বুধবার সেতুর ওপরে বসা এই বাজার থেকে কয়েক পদের মাছ কিনতে দেখা যায়। তিনি বলেন, অনেক সময় অফিস থেকে যাওয়ার পথে তিনি এখান থেকে কেনাকাটা করেন।

শুধু শওকত আলী নন, বুধবার অসংখ্য মানুষকে বাজার করতে দেখা যায়। এতে সংকুচিত হয়ে গেছে চলাচলের পথ।

সোহেল মজুমদারের বাসা বাসাবো, অফিস মতিঝিলে। সময় বাঁচানোর জন্য তিনি নিয়মিত এই পদচারী-সেতু ব্যবহার করেন। তিনি বলেন, বহু বছর ধরেই তিনি এই বাজার দেখছেন। তিনি নিজেও মাঝেমধ্যে এখান থেকে বাজার করেন। তবে কেনাকাটার কারণে অনেক সময় ভিড় লেগে যায়। সে সময় চলাচলে সমস্যা হয়।

একজন পথচারী বলেন, প্রায় ৮০০ ফুট দীর্ঘ রেলওয়ের এই পদচারী-সেতু খিলগাঁও-মতিঝিলের পথ সংক্ষিপ্ত করেছে। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এই পদচারী-সেতু ব্যবহার করে। কিন্তু সেতুর ওপর বাজার বসায় পথচারীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়।

একজন ঘড়ি বিক্রেতা বলেন, এই বাজারের কোনো নিশ্চয়তা নেই। যখন-তখন উঠিয়ে দেয়। উঠিয়ে দিলে তাঁরা অন্য জায়গায় গিয়ে বসেন। পরে আবার সুযোগ বুঝে ফিরে আসেন।

চাকরিজীবী সাবিকুন নাহার বলেন, ‘পোস্ট অফিসের সামনের অংশ দিয়ে পদচারী-সেতুতে ওঠার পর পথটা অনেক নিরিবিলি। সন্ধ্যার পর একটু গা ছমছম করে। তবে বাজারের অংশে সরগরম থাকে। আবার ভিড়ও হয়।’

তবে এখানে বসতে হলে দোকানিদের চাঁদা দিতে হয়। তবে কাকে দেন, তা স্পষ্ট করে বলেননি কোনো বিক্রেতা। সবাইকে একই পরিমাণ চাঁদা দিতে হয় না। দোকানিদের কাছ থেকে দৈনিক ২০ টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা নেওয়া হয়।

মো. মানিক নামের ফল বিক্রেতা বলেন, দিনের বেলা তাঁরা ফল বিক্রি করেন। রাতে এই সেতু দিয়ে চলাচলকারী মানুষের নিরাপত্তায় কাজ করেন। রেলওয়ে থানা-পুলিশই তাঁদের কয়েকজনকে এ কাজ দিয়েছে।

ঢাকা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াসিন ফারুক মজুমদার বলেন, ‘আমাদের লোকবল কম। বাজার বসার আগে এই সেতু পার হওয়ার সময় পথচারী ও যাত্রীদের হয়রানি হতো। রেলের সেতুর ওপরে বাজারটি থাকায় পথচারী ও যাত্রীদের হয়রানি-ছিনতাই কমেছে। দিনের বেলায় এই সেতুর ওপর ব্যবসা করেন এমন ছয়জন কমিউনিটি পুলিশের কাজে সহায়তা করেন। তাঁদের পুলিশের পক্ষ থেকে কার্ড দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, রেলওয়ে পুলিশ এই সেতুতে বসা দোকানদারদের কাছ থেকে কোনো চাঁদা নেয় না। অন্য কেউ নেয় কি না, সে বিষয়ে তিনি জানেন না।

রেলওয়ের সেতু প্রকৌশলী (পূর্ব) শেখ নাইমুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পদচারী-সেতুটি কেবল পথচারী ও যাত্রী পারাপারের জন্য। সেতুতে বাজার বসানো অবৈধ।