প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ধর্ষণ মামলা, ভুয়া ভিডিও
ফরিদপুরে এক কলেজছাত্রীকে একটি মেসে নিয়ে ধর্ষণ এবং সে দৃশ্য ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে মামলা করেন মেয়ের বাবা। ধর্ষণের দৃশ্য দাবি করে একটি ভিডিওচিত্রও সাংবাদিকদের সরবরাহ করেন তিনি। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ভিডিওচিত্রটি ভুয়া।
অভিযোগ আছে, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ধর্ষণের অভিযোগ এনে হয়রানি করছে মেয়ের পরিবার। চার বছর আগে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নে নামযজ্ঞ পালন করা নিয়ে বিরোধের জের ধরে এ মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।
থানায় দায়ের করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১২ আগস্ট দুজন তরুণ কলেজ হোস্টেলে গিয়ে ওই মেয়েটিকে জানান, তাঁর বাবা অসুস্থ। এ কথা শুনে মেয়েটি তাঁদের সঙ্গে রওনা দেন। পরে তাঁকে ফরিদপুর শহরের একটি মেসে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। এ সময় চারজন ওই ধর্ষণে সহযোগিতা করেন। ঘটনার ভিডিওচিত্রও ধারণ করেন তাঁরা।
ধর্ষণচিত্র ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে গত ৮ অক্টোবর মেয়ের বাবা অনিল রায় বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনসহ তথ্যপ্রযুক্তি আইনে পাঁচজনকে আসামি করে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। অভিযুক্ত সবাই মেয়েটির গ্রামের বাসিন্দা। ভিডিওটি ২৯ নভেম্বর অনিল রায় ও মেয়ের চাচা অরবিন্দ রায় প্রথম আলোর ফরিদপুর ও রাজবাড়ী প্রতিনিধির কাছে নিয়ে আসেন।
দুই মিনিট নয় সেকেন্ডের ওই ভিডিওচিত্রটি বাংলা নয়; মালায়ালম ভাষার। এদিকে ভিডিওটি তাঁর নয় বলে স্বীকার করেছেন ওই ছাত্রী। তিনি জানান, যে ভিডিওটি দেওয়া হয়েছে, সেটি তাঁর ভিডিও নয়। এ বিষয়ে তাঁর বাবা ও মামলার বাদী অনিল রায় বলেন, ‘ভিডিওটি আমি নিজেও দেখিনি। এটি মেয়ের চাচাতো ভাই অরিন্দমের মাধ্যমে সংগ্রহ করেছি।’ তবে অরিন্দম ভিডিওটি কোথায় বা কার মাধ্যমে পেয়েছেন, এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ফণীভূষণ দাস বলেন, অনিল রায়সহ ছয়টি পরিবার নামযজ্ঞের নামে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা তুলতেন। কিন্তু ঠিকমতো হিসাব দিতেন না। এ জন্য গ্রামবাসী তাঁদের বয়কট করে। এ কারণে বেশ কিছু দিন ধরে গ্রামবাসীকে ফাঁসানোর জন্য তাঁরা বিভিন্ন মামলা করে হয়রানি করছেন।
ধর্ষণ মামলার এক আসামি বলেন, মিথ্যা অভিযোগের এ মামলায় তিনি ২৬ দিন জেলে ছিলেন। এ সময় তিনি স্নাতক প্রথম বর্ষের দুটি বিষয়ের মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিতে পারেননি। তাঁর মা জানান, ছেলেকে জেল থেকে বের করার টাকা জোগাড় করতে ১১ শতাংশ জমি বিক্রি করতে হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিপুল দে জানান, মামলাটি তথ্যপ্রযুক্তি আইনে হলেও কোনো ভিডিওচিত্র পাওয়া যায়নি। মেয়েটির শারীরিক পরীক্ষায়ও ধর্ষণের আলামত মেলেনি।