প্রেমিকাকে খুনের পর পাশে বসে খান গাঁজা, সিগারেটে পোড়ান লাশ

শনিবার নেত্রকোনা থেকে আসামি মাহিবুর কামালকে গ্রেপ্তার করা হয়
ছবি: সংগৃহীত

১২ মার্চের ঘটনা। রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার বিএফআইডিসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত টয়লেটের ভেতর থেকে এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ জানিয়েছিল, ওই নারীর পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি তারা। পরে হত্যাকাণ্ডটির রহস্য উদ্‌ঘাটনে ছায়া তদন্তে নামে র‌্যাব। জানা যায়, নিহতের নাম হাসিনা আক্তার ওরফে সুমি (৩০)। খুনি আর কেউ নন, খোদ তাঁর মাদকাসক্ত প্রেমিক মাহিবুর কামাল (২২)। মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে প্রেমিকাকে খুন করেছেন তিনি। হাসিনার লাশের পাশে বসেও গাঁজা সেবন করেছেন প্রেমিক মাহিবুর। সিগারেটের আগুনে ঝলসে দিয়েছেন লাশ। হাসিনা নিজেও ছিলেন মাদক ব্যবসায়ী।

মাহিবুর কামালকে গতকাল শনিবার নেত্রকোনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরপর তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে খুনের এ নৃশংস বর্ণনা দেয় র‌্যাব। আজ রোববার র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, এই খুনের পেছনে মাদক, মাদক ব্যবসা, অনৈতিক সম্পর্ক ও পারিবারিক অশান্তি কাজ করেছে।

মাহিবুর কামাল
ছবি: সংগৃহীত

র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, ১২ বছর আগে দ্বীন ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেছিলেন হাসিনা আক্তার। এক কন্যাসন্তানকে দত্তক নিয়েছিলেন এ দম্পতি। দ্বীন ইসলাম থাকতেন বান্দরবানে। হাসিনা তাঁর মেয়েকে নিয়ে কাপ্তাইয়ে থাকতেন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য ছিল। একপর্যায়ে মাদক ব্যবসা ও বিভিন্ন অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে স্বামী ও নিজ পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তাঁর প্রায় ঝগড়া হতো। ছয় মাস আগে স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় তাঁর।

হত্যাকাণ্ডের এক মাস আগে মাহিবুরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন হাসিনা। মাহিবুর কামাল ১৪ বছর বয়স থেকে মাদকাসক্ত। তিনি প্রায়ই ইয়াবা ও গাঁজা সেবন করেন। মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতনে একটি করাত মিলে কাজ করলেও তাঁর জীবনযাপন ছিল উচ্ছৃঙ্খল। হাসিনার সঙ্গে সম্পর্ক হওয়ার পর মাহিবুরকে বিয়ের জন্য পরিবার থেকে চাপ দেওয়া হয়। অপর দিকে হাসিনা মাহিবুরকে চাপ দিতে থাকেন বিয়ের জন্য।

এই অবস্থায় ১১ মার্চ বিকেলে কাপ্তাই বিএফআইডিসি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে আসেন মাহিবুর কামাল। বিয়ের কথা নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে হাসিনাকে ইট দিয়ে আঘাত করেন মাহিবুর। অজ্ঞান হয়ে গেলে পরে আরও ১৫ বার ইটের আঘাত করা হয় মাথায়। এতে হাসিনার মাথা থেঁতলে যায়।

র‌্যাব কর্মকর্তা এম এ ইউসুফ আরও বলেন, ইটের আঘাতে হাসিনা আক্তার যখন মারা যান, তখন তাঁর প্রেমিক মাহিবুর লাশের পাশে বসে গাঁজা, সিগারেট সেবন করেন। পরে তাঁর মাথায় লাশ গুমের চিন্তা আসে। এরপর হাসিনার লাশকে স্কুলের পরিত্যক্ত টয়লেটে নিয়ে যান মাহিবুর। তাঁর কাছে থাকা জ্বলন্ত সিগারেট দিয়ে হাসিনার লাশে আগুন ধরিয়ে দেন। লাশটি অর্ধ পোড়া হওয়ার পর রাতে বাসায় চলে আসেন মাহিবুর। সেদিনই ঘটনাটি সম্পর্কে তিনি তাঁর মাকে খুলে বলেন। মায়ের পরামর্শে কাপ্তাই থেকে পালিয়ে নেত্রকোনা চলে যান। তাঁদের আদি বাড়ি নেত্রকোনা।

মামলার বাদী ও নিহত হাসিনার মা আমেনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, পারিবারিক অশান্তির কারণে তাঁর মেয়ে মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েছিলেন। মাদক ব্যবসা থেকে ফিরে আসার চেষ্টা করলেও সিন্ডিকেটের কারণে পারেননি। মেয়ের হত্যাকারীর ফাঁসি দাবি করেছেন আমেনা বেগম।