আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের সন্দেহভাজন হিসেবে ওমান থেকে ধরে আনা সুমন সিকদারকে (মুসা) জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এই হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত আরও কয়েকজনের নাম বলেছেন তিনি। তাঁর দেওয়া এসব তথ্য যাচাইয়ে এই মামলায় গ্রেপ্তার দুই আসামিকে সুমন শিকদারের মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
সে কারণে আজ সোমবার নাসির উদ্দিন ওরফে কিলার নাসির ও মোরশেদুল ইসলাম ওরফে কাইল্লা পলাশকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছিল পুলিশ। আদালত তাঁদের দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন।
দলীয় ও অপরাধজগতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জেরে গত ২৪ মার্চ রাতে ঢাকার শাহজাহানপুরের আমতলা মসজিদ এলাকায় এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম। সে সময় ঘটনাস্থলে রিকশায় বসে থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফরিন ওরফে প্রীতিও (২২) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনা হিসেবে সুমন শিকদারের নাম উঠে আসে। তত দিনে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সুমন শিকদার। বাংলাদেশ পুলিশের তিনজন কর্মকর্তা ওমানে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনেন। এরপর তাঁর ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদে সুমন শিকদার অনেকের নাম বলেছেন। এসব তথ্য যাচাই–বাছাই করতেই তাঁকে অন্য আসামিদের মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সে কারণেই আজ নাসির উদ্দিন ও মোরশেদুল ইসলামকে রিমান্ডে পাওয়ার জন্য আদালতে তোলা হয়েছিল। এখন তিনজনকে এক জায়গায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে সব বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে বলে তাঁরা মনে করছেন।
গোয়েন্দা পুলিশের তথ্যমতে, সুমন শিকদারের বিরুদ্ধে রাজধানীর মতিঝিল, মিরপুরের পল্লবী থানাসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্র মামলাসহ ১২টি মামলা রয়েছে। তিনি ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রকাশ-বিকাশ গ্রুপ ও মানিক গ্রুপের সদস্য। মতিঝিল এজিবি কলোনিতে যুবলীগ নেতা রিজভী হাসান ওরফে বোঁচা বাবু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি সুমন শিকদার। রিজভী হাসান হত্যা মামলার বাদী তাঁর বাবা আবুল কালাম। এই আবুল কালাম আবার জাহিদুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। রিজভী হত্যা মামলা মিটমাটের জন্য সুমন শিকদারসহ আসামিরা জাহিদুলের কাছে গিয়ে ব্যর্থ হন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ ও র্যাবের কর্মকর্তারা বলেন, দলীয় প্রতিপক্ষ জাহিদুলকে হত্যা করতে রিজভী হাসান হত্যা মামলার আসামিদের ব্যবহার করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্যমতে, তিন-চার মাস আগে জাহিদুল হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিকাশ-প্রকাশ গ্রুপের অন্যতম সদস্য সুমন শিকদারের সঙ্গে ১৫ লাখ টাকার চুক্তি করেন মতিঝিল ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক। এর মধ্যে প্রথমে সুমন শিকদারকে ৯ লাখ টাকা দেন তিনি। ১২ মার্চ টাকা নিয়ে দুবাই চলে যান সুমন শিকদার।