গারো দুই স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের মামলা
মূল আসামি রিয়াদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ছিল আগেও: র্যাব
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে স্কুলপড়ুয়া গারো সম্প্রদায়ের দুই কিশোরীকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণের মামলার মূল অভিযুক্ত সোলায়মান হোসেন রিয়াদের (২১) বিরুদ্ধে এর আগেও এ ধরনের কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছিল। স্থানীয় সালিসের মাধ্যমে এসব অভিযোগের মীমাংসা করায় বারবারই তিনি পার পেয়ে যান। ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে গতকাল শুক্রবার রাতে রিয়াদকে গ্রেপ্তারের পর আজ শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে র্যাব।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। র্যাব বলছে, বাবা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হওয়ার সুবাদে রিয়াদ সুবিধা পেয়ে থাকতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২৬ ডিসেম্বর রাতে গারো সম্প্রদায়ের একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে দুই কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়। তাদের সঙ্গে থাকা ১০ বছরের শিশু পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় মামলা হয় ৩০ ডিসেম্বর। খন্দকার আল মঈন বলেন, লোকলজ্জার ভয় এবং প্রাণনাশের হুমকির কারণে কিশোরীদের পরিবার মামলা করতে দেরি করেছিল।
রিয়াদ এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত জানিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, ইভ টিজিং, উত্ত্যক্ত করা, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছে রিয়াদের বিরুদ্ধে। এর আগেও তিনি ধর্ষণ করেছেন। এসব ঘটনা স্থানীয়ভাবে সালিসে মীমাংসা করা হয়েছে বলে গারো সম্প্রদায়ের লোকজন ও এলাকাবাসী জানিয়েছেন। রিয়াদের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১৩ জনের একটি বখাটে গ্রুপ তৈরি হয়েছে। তাঁরা চলাফেরা করেন কিশোর গ্যাং স্টাইলে। তাঁদের অধিকাংশের বয়স ১৯ থেকে ২১ বছর।
রিয়াদের বাবা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছিলেন জানিয়ে খন্দকার আল মঈন বলেন, বাবা জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুবাদে রিয়াদ সুবিধা পেতে পারেন।
দুই কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গতকাল রাতে মামলার অপর পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে। ময়মনসিংহ জেলা ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম জানান, পাঁচ আসামিকে ময়মনসিংহ ও গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ডিবি পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গতকাল রাতে গ্রেপ্তার হওয়া অন্য আসামিরা হলেন শরীফ, মিয়া হোসেন, মিজান, রোকন ও হামিদ। মামলার প্রধান আসামি রিয়াদ। সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিয়াদসহ ছয় আসামির গ্রেপ্তারের খবর প্রকাশিত হলেও রিয়াদকে তারা (ডিবি পুলিশ) গ্রেপ্তার করেনি বলে জানানো হয়। মূল আসামি রিয়াদকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে র্যাব। আর মামলার এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করার কথা জানায় ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
পুলিশ সূত্র বলছে, ২৭ ডিসেম্বর রাতে প্রতিবেশীর বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে বাড়ি ফেরার পথে ভারত সীমান্তবর্তী ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার কাটাবাড়ি গ্রামে দুই কিশোরীকে আটকে হত্যার ভয় দেখিয়ে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করেন কিছু তরুণ। পরে ৩০ ডিসেম্বর ধর্ষণের শিকার হওয়া এক কিশোরীর বাবা বাদী হয়ে হালুয়াঘাট থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় ১০ জনকে আসামি করা হয়। মামলার পর আসামিদের গ্রেপ্তার করতে স্থানীয় বাসিন্দারা একাধিকবার মানববন্ধন ও প্রতিবাদ করে আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।