যৌন হয়রানির অভিযোগ সালিস করে মীমাংসা!
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ঘটনা সালিস করে মীমাংসা করা হয়েছে। এতে অভিযুক্ত বখাটেদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সালিসে মেয়েটির পরিবারের কোনো সদস্য উপস্থিত ছিলেন না।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে দিলালপুর উচ্চবিদ্যালয়ে ওই সালিস হয়। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ছাত্রীর পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ ও ২১ অক্টোবর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর নির্বাচনী পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে দিলালপুর উচ্চবিদ্যালয়ের ৯ ছাত্র ওই ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করে। পরে ২২ অক্টোবর এ ঘটনার বিচার চাইলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ছাত্রদের চিহ্নিত করে নোটিশ দিয়ে সালিসে হাজির থাকার নির্দেশ দেয়।
এ নিয়ে ২৪ অক্টোবর প্রথম আলোয় ‘৯ ছাত্রের বিরুদ্ধে শিশুকে যৌন হয়রানির অভিযোগ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক রুহুল আমীন বলেন, তিনি ঘটনাটি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মালেক চৌধুরী ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হাফিজুর রহমানকে জানান। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চাপের মুখে ছাত্রীর পরিবার থানায় মামলা করতে রাজি হয়নি। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর পুলিশের বিভিন্ন সংস্থা এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করে। পরে পুলিশ ও প্রশাসনের চাপে সালিসের আয়োজন করা হয়।
দিলালপুর বাজারের পাশের গ্রামের ছয়জন বাসিন্দা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরের পর বিদ্যালয়ের একটি কক্ষের দরজা-জানালা বন্ধ করে সালিস বসানো হয়। বিকেল চারটার দিকে কক্ষের দরজা খোলার পর এলাকাবাসী জানতে পারে, অভিযুক্ত ৯ ছাত্রকে অভিভাবকেরা জুতাপেটা করেছেন।
অভিযুক্ত ৯ ছাত্র হচ্ছে মো. মোবারক হোসেন, আরমান মিয়া, আরিফুল, আশরাফুল, শফিউল আরেফিন, রাকিবুল, হারুন অর রশিদ, আজিজুল ও সেলিম। অভিযোগের বিষয়ে গত ২৩ অক্টোবর আরিফুল ও রাকিবুলের সঙ্গে কথা হয়। এ সময় তারা দাবি করে, ঘটনার সঙ্গে তারা জড়িত নয়। এ ঘটনাটি তারা দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখেছে।
সালিসে উপস্থিত ছিলেন সিংরইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, অভিযুক্ত ছাত্ররা ভবিষ্যতে এ ধরনের অপকর্ম করবে না মর্মে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা চায়। পরে অভিভাবকেরা তাদের মৃদু শাসন করেন।
বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, যেভাবেই হোক ঘটনাটি মীমাংসা করা হয়েছে।
জানতে চাইলে ইউএনও মো. হাফিজুর রহমান বলেন, মেয়েটির পরিবার এ ঘটনায় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করতে চায়নি। তারা এখনো অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।