‘আমরা টিফিনের সময় বাইরে গেছিলাম। পরে স্যার আমরারে ক্লাসের ভিতরে আইন্যা আটকাইয়া পাঁচটা বেত দিয়া মারছে। আমরা চিল্লায়া কানছি। কিন্তু স্যার বাইড়াইছে আর কইছে, আইজকাই তরার লেহাপড়া শেষ।’ পরে আহত শিশুদের শ্রেণিকক্ষে ফেলে রেখে ওই শিক্ষক বিদ্যালয় থেকে চলে যান।

ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল শনিবার ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বেত্রাঘাতের সময় প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম চৌধুরী তাঁর কক্ষে অবস্থান করছিলেন। তবে তিনি শিশুদের চিৎকার শুনতে পাননি বলে দাবি করেন।

খবর পেয়ে বিকেল সোয়া চারটার দিকে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বেত্রাঘাতে আহত শিশুদের অভিভাবকেরা প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম চৌধুরীকে তাঁর কক্ষে আটকে বিদ্যালয়টি ঘেরাও করে রেখে মারধরের বিচার চাইছেন। তখন মাঠের মাঝখানে প্রায় ৪০ জনের মতো আহত শিশুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এদের প্রত্যেকের হাত ও পায়ে বেতের আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।

এসব শিশুর একজন চতুর্থ শ্রেণির ইমরান বলে, তখন টিফিনের সময় চলছিল। সহপাঠীদের নিয়ে সে বিদ্যালয়ের মাঠে খেলা করছিল। হঠাৎ করে শিক্ষক আবু সালেহ ক্ষিপ্ত হয়ে সবাইকে শ্রেণিকক্ষে ফিরতে বলেন। তারা ভয়ে ভয়ে শ্রেণিকক্ষে ঢোকে। ওই শিক্ষক তখন কক্ষের দরজা লাগিয়ে দিয়ে হাতে থাকা বেত দিয়ে শ্রেণিকক্ষের সবাইকে পেটাতে থাকেন। শিশুরা তখন চিৎকার করলেও বেত্রাঘাত থামেনি। অনেকে বেতের আঘাত সইতে না পেরে বেঞ্চের মাঝে থাকা খালি জায়গায় পড়ে যায়।

তৃতীয় শ্রেণির জামান মিয়া তার পায়ে বেত্রাঘাতের চিহ্ন দেখিয়ে জানায়, ওই শিক্ষক পাঁচটি বেত নিয়ে তাদের শ্রেণিকক্ষে ঢুকেছিলেন।

সাবিনা নামের একজন মা বলেন, ‘বিদ্যালয়ে বাচ্চাদের পেটানো হলে কীভাবে সহ্য করি, বলেন?’

নান্দাইল-দেওয়ানগঞ্জ সড়কের পাশে অবস্থিত চানপুর বিদ্যালয়টি। ওই সড়ক দিয়ে নিয়মিত চলাচল করেন এ রকম চারজন পথচারী বলেন, তাঁরা যাতায়াতের সময় শ্রেণিকক্ষ থেকে ছাত্রদের উদ্দেশে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ হতে শুনেছেন। এ বিষয়ে শিশুদের কাছে জানতে চাইলে তারা শিক্ষক আবু সালেহর কথাই বলে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চানপুর গ্রামের আটজন বাসিন্দা বলেন, এটি নামেই কেবল সরকারি বিদ্যালয়। আদতে এটি শিক্ষার্থী নির্যাতনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। নির্যাতন সইতে না পেরে অনেক শিশুর এই বিদ্যালয় ছাড়ার নজির রয়েছে।

তারা মিয়া বলেন, গতকাল ছুটির পর শিশুরা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে বাড়ি ফিরছিল। তখন তিনি তাদের জিজ্ঞেস করে বেত্রাঘাতের ঘটনা জানতে পারেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির (এসএমসি) সদস্য দুলাল মিয়া বলেন, এ ধরনের অভিযোগ কমিটির কাছে কোনো সময় আসেনি। তবে ঘেরাওয়ের খবর শুনে তিনি বিদ্যালয়ে এসে ঘটনাটি জানতে পেরেছেন।

অভিযুক্ত শিক্ষক আবু সালেহ বলেন, তিনি তখন নামাজ পড়ছিলেন। ওই সময় বল এসে পড়ে তাঁর কাছে। তিনি নামাজ ছেড়ে উঠে গিয়ে শিক্ষার্থীদের চিৎকার করতে বারণ করেন। এরপরও তারা হইচই করতে থাকলে তিনি কয়েকজনকে মৃদু শাসন করেছেন মাত্র।

তবে অভিভাবকেরা ওই শিক্ষকের যুক্তি মানতে নারাজ। তাঁরা ওই শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে প্রত্যাহারের দাবি করেন। পরে এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম বিদ্যালয়ে এসে অবরুদ্ধ প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম চৌধুরীকে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মুক্ত করেন।

জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনারকলী নাজনীন বলেন, অভিভাবকেরা অভিযোগ দিলে তিনি ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবেন।