সাজাপ্রাপ্ত দুজনকে গ্রেপ্তার করে রায় কার্যকরের দাবি
বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতা আরিফ রায়হান দীপ হত্যাকাণ্ড মামলার রায়েও সন্তুষ্ট নয় তাঁর পরিবার।
দুই বছর আগে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীদের হামলায় নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের মামলায় নিম্ন আদালত ২০ জনকে ফাঁসি ও ৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু ১৯ বছর আগে ছাত্রদলের দুই পক্ষের গোলাগুলিতে নিহত বুয়েট ছাত্রী সাবেকুন নাহার সনি হত্যা মামলার দুই আসামি এখনো পলাতক।
এদিকে আট বছর আগে খুন হওয়া বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতা আরিফ রায়হান দীপ হত্যাকাণ্ড মামলার রায়েও সন্তুষ্ট নয় তাঁর পরিবার।
আবরার হত্যাকাণ্ডের বিচারের ক্ষেত্রে সামাজিক চাপের পাশাপাশি মামলার আইনি লড়াইয়ে বুয়েট কর্তৃপক্ষেরও সহযোগিতা ছিল। কিন্তু সাবেকুন নাহার ও আরিফ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কর্তৃপক্ষের তেমন ভূমিকা ছিল না। তবে বুয়েট কর্তৃপক্ষ বলছে, এই দুই পরিবার চাইলে আবরারের পরিবারের মতো তাদেরও সহযোগিতা করা হবে।
সাবেকুন হত্যা মামলার দুই আসামি পলাতক
২০০২ সালের ৮ জুন দরপত্র নিয়ে বুয়েট শাখা ছাত্রদলের দুই পক্ষের গোলাগুলিতে নিহত হন কেমিকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সাবেকুন নাহার। ঢাকার বিচারিক আদালতে এ হত্যা মামলার রায় হয় ২০০৩ সালের ২৯ জুন। রায়ে ছাত্রদলের নেতা মুশফিক উদ্দিন ওরফে টগর, মোকাম্মেল হায়াত খান ওরফে মুকি ও নুরুল ইসলাম ওরফে সাগরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া পাঁচজনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। পরে ২০০৬ সালের ১০ মার্চ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিনজনের সাজা কমিয়ে তাঁদেরও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন উচ্চ আদালত। পাশাপাশি যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া পাঁচ আসামির মধ্যে দুজনকে খালাসও দেওয়া হয়। এ হত্যাকাণ্ডে দণ্ডিত ছয় আসামির মধ্যে চারজন কারাগারে আছেন। মোকাম্মেল ও নুরুল এখনো পলাতক।
সাবেকুনের বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘যতটুকু জেনেছি, মোকাম্মেল ও নুরুল দেশের বাইরে আছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর হলে তাঁদের দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করা সম্ভব। আমাদের দাবি, অবিলম্বে তাঁদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত রায় কার্যকর করা হোক।’
রায়ে অসন্তোষ আরিফের পরিবারের
২০১৩ সালের ৯ এপ্রিল বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও বুয়েট ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফের মাথা ও পিঠে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। ঘটনার ৩ মাস পর ২ জুলাই রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে আরিফ মারা যান।
হামলার ১ দিন পর ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল আরিফের ভাই রিয়াজ মোর্শেদ গুলশান থানায় একটি হত্যাচেষ্টার মামলা করেন। হামলার ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ১৭ এপ্রিল মো. মেজবাহ উদ্দিন নামের বুয়েটের এক ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। মেজবাহ উদ্দিন হেফাজতে ইসলামের সমর্থক বলে তখন ডিবি কর্মকর্তারা দাবি করেন।
ডিবি বলেছিল, ৬ এপ্রিল ঢাকায় হেফাজতের সমাবেশে আসা লোকজনকে খাবার সরবরাহ করায় বুয়েটের একটি হলের মসজিদের ইমামকে মারধর করে পুলিশে দিয়েছিলেন আরিফ ও তাঁর বন্ধুরা। এ জন্যই আরিফের ওপর হামলা করেন মেজবাহ।
আরিফ মারা যাওয়ার পর তাঁর ভাইয়ের করা হত্যাচেষ্টার মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি ওই মামলার রায় হয়। রায়ে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪-এর বিচারক আবদুর রহমান সরদার মামলার একমাত্র আসামি মেজবাহ উদ্দিনকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত। সেই রায়ের নথি সংগ্রহ করেছে প্রথম আলো। এতে দেখা যাচ্ছে, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মেজবাহ এখনো পলাতক।
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের রায় ঘোষণার পর ৯ ডিসেম্বর আরিফকে ‘শহীদ’ উল্লেখ করে তাঁর হত্যা মামলারও দ্রুত রায় দাবি করে ছাত্রলীগ। বাস্তবে আরিফের পরিবার বা হত্যা মামলার ব্যাপারে খোঁজই নেয়নি ছাত্রলীগ। খোঁজ রাখেনি বুয়েট কর্তৃপক্ষও।
আরিফের বাবা আলী আজম আক্ষেপ করে বলেন, ‘রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে চাই। কিন্তু কর্তৃপক্ষের সমর্থন ছাড়া আমরা তা করতে পারব না।’
সহায়তা করতে রাজি বুয়েট
আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডের রায় ঘোষণার পর সংবাদ সম্মেলনে বুয়েটের উপাচার্য সত্যপ্রসাদ মজুমদার বলেছিলেন, ‘আবরার হত্যা মামলায় আইনি সহায়তা, আনুষঙ্গিক খরচ—সবকিছুই বুয়েট বহন করেছে। এ বাবদ এখন পর্যন্ত ৫৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আর্থিক সংকটে পড়ায় আবরারের পরিবারকে গত ১ জুলাই থেকে প্রতি মাসে ৭৫ হাজার টাকা করে আমরা দিচ্ছি। নৈতিক দায়িত্বের জায়গা থেকে এই সহযোগিতা করে যাব।’
উপাচার্য আরও বলেন, সাবেকুন নাহার ও আরিফের পরিবার চাইলে তাদেরও আইনি লড়াইয়ে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত কর্তৃপক্ষ।