সাবিনার পরিবার মামলা তুলে নিতে চাইছে

ডিম পোচ করতে গিয়ে কুসুম ছড়িয়ে যাওয়ায় নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মী সাবিনার (১১) পরিবার আর মামলা চালাতে চাইছে না। টাকার বিনিময়ে আসামিপক্ষের সঙ্গে তাদের সমঝোতা হচ্ছে।

সাবিনার বাবা মো. বাদল আজ শনিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেছেন, হাসপাতাল থেকে সাবিনা একবার বাড়ি এসেছিল। বর্তমানে সে ঢাকায় গেছে আদালত থেকে মামলার কাগজ তুলতে। আসামিপক্ষ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছে, বলেছে আরও টাকা দেবে। তবে কত টাকা দেবে, তা বলেনি।
মেয়েকে তো নির্যাতন করেছে—এ প্রশ্নের উত্তরে বাদল বলেন, ‘তা তো করছেই।’
গত জুন মাসের শেষের দিকে ডিম পোচ করতে গিয়ে কুসুম ছড়িয়ে যায় বলে সাবিনার বুকে ও হাতে গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দেন গৃহকর্ত্রী আয়েশা লতিফ। সাবিনার ভাষায় তিনি ‘ম্যাডাম’। এই ম্যাডাম রুটি বানানোর বেলুন দিয়ে পেটান। আঘাতে কালো হয়ে ফুলে প্রায় বন্ধ হয়ে যায় সাবিনার দুই চোখ। মাথা, গলা, পিঠ, ঊরুসহ সারা শরীরেও নতুন-পুরোনো অসংখ্য দাগ। জুলাই মাসের শুরুতে ঘটনা জানাজানি হয়।

পল্লবী থানা, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) এবং সাবিনাকে উদ্ধারকারী এলাকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে সাবিনা জানিয়েছিল তাকে পেটানোর কারণ। পল্লবী থানার উদ্যোগে সাবিনাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি করা হয়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তড়িঘড়ি উদ্যোগেই ‘উন্নত চিকিৎসা’র জন্য ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়।
দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে পল্লবী থানার মামলাটি ঢাকার ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পুলিশ পরিদর্শক আমেনা খাতুন।

সাবিনার বাবার সঙ্গে কথা বলার আগে কথা হয় আমেনা খাতুনের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাবিনার মেডিকেল রিপোর্ট ও জবানবন্দি নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। গত বুধবার সিএমএইচ কর্তৃপক্ষের কাছে সাবিনার সঙ্গে দেখা করতে চাই বলে দরখাস্ত দিয়েছি। দরখাস্তের এখন পর্যন্ত কোনো উত্তর পাইনি। আর আসামি যে হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন, তার একটি কপি পল্লবী থানা থেকে দিয়েছে।’

মিরপুর জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আসামির জামিন পাওয়ার বিষয়টি আদালতের বিষয়। পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত চলছে।

ছয় মাস আগে টাঙ্গাইলের সাবিনা ঢাকায় কাজ নেয় লে. কর্নেল তসলিম আহসানের বাসায়। মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, শিশুটির ওপর এই নির্যাতন চালান তসলিম আহসানের স্ত্রী আয়েশা লতিফ। জানা গেছে, ঘটনার সময় তসলিম আহসান যশোর ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ছিলেন।

আরও পড়ুন...