হুমকিদাতা সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা!

বরগুনা সদর উপজেলায় মুঠোফোনে হত্যার হুমকি দেওয়ার সন্দেহে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ও আওয়ামী লীগের এক নেতা এবং তাঁর লোকজন ওই ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিহত ওই ব্যক্তির নাম সেন্টু গাজী (৪০)। তিনি উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের কেওড়াবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ময়নাতদন্ত শেষে তাঁর লাশ দাফন করা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন ও সেন্টুর ছোট ভাই নান্টু গাজী জানান, তাঁর ভাই ঢাকায় রিকশা চালাতেন। গত ২৯ নভেম্বর তিনি বাড়িতে আসেন। পরদিন সকালে সেন্টু বরগুনা শহরে বাজার করতে গেলে লাকুরতলা এলাকা থেকে বুড়িরচর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মাঈন উদ্দিন ওরফে ময়না ও তাঁর লোকজন তাঁকে ধরে বুড়িরচরের সুরেশ্বর বাজারে নিয়ে যান। সেখানে সেন্টুকে বেদম মারধর করে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে পেটে পা দিয়ে একের পর এক আঘাত করলে তিনি গুরুতর জখম হন। পরে ডাকাত আখ্যা দিয়ে সেন্টুকে বুড়িরচর ইউপির চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমানের কাছে নিয়ে যান মাঈন উদ্দিন। এ সময় সিদ্দিকুর মাঈন উদ্দিনকে ধমক দিয়ে দ্রুত সেন্টুর চিকিৎসা করাতে বলেন। পরে সেখান থেকে সদর থানায় নিয়ে ডাকাত আখ্যা দিলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজ হোসেন পুলিশের নথিতে সেন্টুর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই বলে জানান। এরপর বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সেন্টুকে তাঁর (মাঈন উদ্দিন) বাড়িতে আটকে রাখেন।
নান্টু আরও জানান, ১ ডিসেম্বর সকালে মাঈন উদ্দিন তাঁকে ফোন করে বাড়িতে ডেকে নেন। সেখানে গেলে তাঁদের স্থানীয় ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে ৫০ টাকার সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই দিন বিকেলে সেন্টু সংজ্ঞা হারিয়ে ফেললে তাঁকে প্রথমে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার আরও অবনতি হলে পরদিন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই দিন রাতেই তাঁর মৃত্যু হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার কয়েকজন জানান, সম্প্রতি অজ্ঞাত একটি মুঠোফোন নম্বর থেকে কে বা কারা মাঈন উদ্দিনকে হত্যার হুমকি দেয়। মাঈন উদ্দিন এ ঘটনায় সেন্টুকে সন্দেহ করেন। এরপর সেন্টু ঢাকা থেকে বাড়ি এলে তাঁকে ধরে নিয়ে যান। গতকাল সকালে সেন্টুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর স্ত্রী শিল্পী বেগম কাঁদছেন। মা রওশন আরা বেগমও ছেলে হারানোর শোকে নির্বাক হয়ে আছেন। সেন্টুর বড় ছেলে কেওড়াবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মেহেদি বলে, ‘বাবায় বাজারে যাওনের আগে আমারে কইয়্যা গ্যাছে সোয়েটার আনবে। আর আইলো না, আমি কারে বাবা ডাকমু। আমার বাবার অপরাধ কী?’
ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। আমি এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’ ইউপি সদস্য মাঈন উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের পাওয়া যায়নি। তাঁর মুঠোফোনও বন্ধ রয়েছে।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ থেকে দেওয়া মৃত্যুসনদে বলা হয়েছে, মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতজনিত কারণে সেন্টুর মৃত্যু হয়েছে। ওসি রিয়াজ হোসেন বলেন, ‘সেন্টুকে থানায় আনার পর আমরা দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নিতে বলেছিলাম। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করতে বলেছি।’