রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের ৪৪টি অক্সিজেন সিলিন্ডারের হদিস নেই। খোয়া যাওয়া এসব সিলিন্ডারের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি সুপারিশ করলেও দায়ী ব্যক্তিদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, রাজবাড়ী জেলার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল এটি। হাসপাতালের হিসাব অনুযায়ী সেখানে বর্তমানে ১০১টি অক্সিজেন ও নাইট্রাস সিলিন্ডার থাকার কথা। কিন্তু হাসপাতালে সিলিন্ডারের সংখ্যা ৫৭টি। কবে বা কীভাবে ৪৪টি সিলিন্ডার হারিয়ে গেছে—এ বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানে না। গত বছর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সিলিন্ডার লাপাত্তা হওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। সে সময় হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ গোলাম ফারুককে প্রধান করে একটি জরিপ কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি গত বছরের নভেম্বরে সিভিল সার্জনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে হাসপাতালের সব ওয়ার্ড থেকে সংগৃহীত অক্সিজেন ও নাইট্রাস সিলিন্ডারের সংখ্যা দেখানো হয় ৫৭টি।
সূত্র জানায়, জরিপ কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে গত বছরের ১৪ মে স্বাস্থ্যসেবা কমিটিতে আলোচনা হয়। সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং সদর হাসপাতালের সাবেক আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রহিম বক্সকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়।
রহিম বক্স বলেন, ‘তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সিভিল সার্জনের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। সিলিন্ডারগুলো বাইরে আনা-নেওয়ার সময় হিসাব খাতায় (স্টক লেজার) ঠিকমতো লিপিবদ্ধ করা হয় নাই। তবে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা জানি না।’
সভার কার্যবিবরণী (রেজুলেশন) সূত্রে জানা যায়, কার্যবিবরণীর ৪ নম্বর আলোচ্যসূচিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সিভিল সার্জন হাসপাতালের অক্সিজেন সিলিন্ডারের হিসাব সভায় উপস্থাপন করেন এবং গঠিত কমিটির প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু সভাকে অবহিত করেন। কিন্তু অক্সিজেন সিলিন্ডারের হিসাবে গরমিল থাকায় সভাপতি এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন। একই সঙ্গে তা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়। তবে ১৩ সেপ্টেম্বরে হওয়া একই কমিটির পরবর্তী সভার কার্যবিবরণীতে এ বিষয়টি আলোচ্যসূচিতে রাখা হয়নি।
হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, হাসপাতালের একটি চক্র বিভিন্ন মূল্যবান মেশিন বাইরের প্যাথলজি ব্যবসায়ীদের দিয়ে থাকে। তারা এর বিনিময়ে অনৈতিক সুবিধা নেয়। আবার দীর্ঘদিন সিলিন্ডার বাইরে থাকার পর একসময় সেটার খোঁজ আর কেউ নেয় না। লাপাত্তা হওয়া প্রতিটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম ৫ হাজার ও প্রতিটি নাইট্রাস সিলিন্ডারের দাম ১০ হাজার টাকা।
সিভিল সার্জন মাহবুবুল হক বলেন, অনেক পুরোনো হওয়ায় এ বিষয়ে কাউকে অভিযুক্ত করা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে আর যাতে কোনো সিলিন্ডার না হারায় সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
রাজবাড়ীর স্থানীয় সাংসদ ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কাজী কেরামত আলী বলেন, খোয়া যাওয়া সিলিন্ডার উদ্ধারের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই।