অটো পাস দুর্বল শব্দ, কারও কিঞ্চিৎ লাভ হলেও ক্ষতিটা বড়

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে গত রোববার কাজী রূপক (১৭) নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গতবারের মতো এবার অটো পাসে এসএসসি উত্তীর্ণ হওয়া যাবে না জেনে আত্মহত্যা করেছে সে। করোনাকালে শিক্ষার্থী ও শিক্ষাব্যবস্থার মতো নানা বিষয় নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে ভৈরবের রফিকুল ইসলাম মহিলা কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. শহীদুল্লাহর সঙ্গে।

প্রশ্ন :

করোনাকালে অটো পাস শিক্ষাব্যবস্থায় কেমন প্রভাব ফেলল?

মো. শহীদুল্লাহ: করোনা আমাদের জীবনব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে চলেছে। শিক্ষার ক্ষতিটা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। এর মধ্যে শিক্ষার্থীরা পরিচিত হলো অটো পাস নামের দুর্বল একটি শব্দের সঙ্গে। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ক্লাসের বাইরে, পড়াশোনায় নেই। মেধা শাণিত হয় মূলত পাঠ থেকে। করোনা প্রাতিষ্ঠানিক ও ঘরোয়া পাঠে বড় গ্যাপ তৈরি করেছে। অটো পাস দিয়ে সরকার সেই গ্যাপ পূরণের চেষ্টা করেছে মাত্র। সেশনজট ও শিক্ষার্থীর মনোবল ধরে রাখার চেষ্টা করেছে। তবে এ গ্যাপে যারা পড়েছে, তারা এখন নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। কারণ, সময় একটা বড় বিষয়। শিক্ষার্থীর জীবন থেকে একটা লম্বা সময় চলে গেছে। চেষ্টা করলেও সেই সময়টা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। শিক্ষার গ্যাপ নিয়ে এখন অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা বিচলিত। একটি অংশের মনের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এটি। তারা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। আর একটা অংশ শিক্ষার গ্যাপটিতে নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি, ভিন্ন পথে চলে গেছে, অপর একটি অংশ শিক্ষাবিমুখ হয়ে পড়েছে। এক কথায় অটো পাস সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

প্রশ্ন :

অটো পাস শিক্ষার্থীর মানসিকতায় কতটুকু প্রভাব ফেলেছে?

মো. শহীদুল্লাহ: অটো পাস শিক্ষা ও শিক্ষার্থীর জন্য দুর্বল শব্দ। এ দুর্বলতায় কারও কিঞ্চিৎ লাভ হলেও ক্ষতিটা বড়। শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অটো পাসকে মেনে নিতে পারেনি। অটো পাস তাদের মনকে দুর্বল করে দিয়েছে। মেধার স্বীকৃতি আদায় করে নেওয়ার সুযোগবঞ্চিত করেছে। মানুষের কাছে অমর্যাদাপূর্ণ করে তুলেছে। বড় একটি অংশের মনে এ ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে যে করোনা যত দিন থাকবে, অটো পাসও থাকবে তত দিন। সুতরাং পড়াশোনা করা যা, না করলেও তা। পড়াশোনা না করেই তো সার্টিফিকেট মিলে। সার্টিফিকেট পাওয়া আর আগের মতো কঠিন কিছু নয়, ফলে এখন সংক্ষিপ্ত পরিসরে ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের একটি অংশ আর নিজেদের মানিয়ে নিতে পারছে না। কচি মন এখন বিচলিত। এ থেকে অনেকেই মানসিক সমস্যায় ভুগছে।

প্রশ্ন :

শিশুদের মনের অবস্থার পরিবর্তন ও টেবিলে ফেরানোর উপায় কী?

মো. শহীদুল্লাহ: এ ক্ষেত্রে মূল দায়িত্বটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই। বিশেষ করে শিক্ষকদের। কম পড়াশোনা করে পাস করে ফেলা যায়—এ ধারণা থেকে বের করে আনার দায়িত্বটুকু শিক্ষকদের নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে হবে, মানসিক পরিচর্যা দিতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পূর্ণ ক্লাস ও পূর্ণ বিষয়ে পরীক্ষায় ফিরতে হবে। এক কথায় নতুন নতুন কর্মসূচি চালু করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অভিভাবকদের যোগসূত্র স্থাপন করতে হবে।

আরও পড়ুন