অতিবৃষ্টি ও পাউবোর বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকেছে সাতক্ষীরার শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে

পানি থই থই করছে সাতক্ষীরা সদরের ভোমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
প্রথম আলো

সাতক্ষীরায় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনায় কিংবা ভবনে পানি উঠেছে। দীর্ঘ দেড় বছর পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছে। এর মধ্যে গত রবি ও সোমবারের অতিবৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে জেলার সাত উপজেলার এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজ মিলিয়ে ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনায় কিংবা শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে পড়েছে। সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার আশাশুনি, কালীগঞ্জ, তালা ও সদর উপজেলার ৬২টি বিদ্যালয়ের আঙিনায় কিংবা শ্রেণিকক্ষে পানি থই থই করছে। তবে এই তালিকার বাইরে ও বাকি তিন উপজেলা মিলিয়ে আরও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢোকার তথ্য প্রথম আলোর কাছে এসেছে।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভোমরা রাশেদা বেগম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ছাপিয়ে পানি ঢুকেছে শ্রেণিকক্ষে। বিদ্যালয়টির নিচতলা পানিতে তলিয়ে গেছে। বিদ্যালয়ের মাঠের তিন ফুট পানি ঠেলে শ্রেণিকক্ষে যাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। ফলে অন্য স্থানে ক্লাস করানোর কথা ভাবছে শিক্ষা অফিস।

পানি ঠেলে শ্রেণিকক্ষে যাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। ফলে অন্য স্থানে ক্লাস করানোর কথা ভাবছে শিক্ষা অফিস।

মেয়েদের জন্য সাতক্ষীরা শহরের একমাত্র বেসরকারি কলেজ ছফুরননেছা মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আশরাফুন নাহার বলেন, কলেজটি বর্তমানে যেন পানিতে ভাসছে। কলেজের শ্রেণিকক্ষে জমেছে হাঁটুপানি। সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা-বাঁকাল এলাকায় প্রতিষ্ঠিত ছফুরননেছা মহিলা কলেজে এইচএসসি থেকে অনার্স পর্যন্ত ছাত্রীরা লেখাপড়া করছেন। চারদিকে চরে বেড়াচ্ছে পোকামাকড় ও বিষধর সাপ। শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে কাপড়চোপড় গুটিয়ে যাচ্ছেন কলেজের ভেতরে। অধ্যক্ষ জানান, পানিনিষ্কাশনের সব পথ বন্ধ। শিক্ষার্থীরা কষ্ট পাচ্ছে। অফিসের কাগজপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়
প্রথম আলো

মাছখোলা এলাকার বাসিন্দা মাকফুর হোসেন বলেন, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাছখোলা হাইস্কুল, মাছখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিতে ডুবে আছে কয়েক মাস। এত দিন সমস্যা হয়নি। সম্প্রতি স্কুল খুলে দেওয়ার পর সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করলে দোতলায় ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। জেলা সদরের বড়দল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থাও একই। সেখানেও জমেছে পানি। পানিনিষ্কাশন না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা রয়েছে চরম ভোগান্তিতে।

কালীগঞ্জ উপজেলার নলতা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল মোনায়েম বলেন, এই বিদ্যালয়, নলতা মোবারকনগর বাজার ও তৎসংলগ্ন এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। এক রাতের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নলতা হাইস্কুল, কেবি আহসানিয়া জুনিয়র স্কুল। তলিয়ে গেছে কালীগঞ্জ মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়। তিনি আরও বলেন, পানিনিষ্কাশনের পথ দখল করে মাছের ঘের করার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পানিতে ডুবে থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কার্যক্রম চালানো সম্ভব হচ্ছে না।

পানি ঢুকে পড়েছে সাতক্ষীরা সদরের মাছখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে
প্রথম আলো

নলতা হাইস্কুলের শিক্ষক হাবিবুর রহমান জানান, মঙ্গলবার ভ্যানে চড়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পানি পার হয়ে স্কুলের বারান্দায় পৌঁছায়। পানি পার হতে না পেরে অনেকেই বাড়ি ফিরে যায়। কালীগঞ্জ উপজেলার ভদ্রখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে হাঁটুপানি। পানি ঢুকেছে শ্রেণিকক্ষে। ফলে সেখানেও ক্লাস করা সম্ভব হচ্ছে না।

আশাশুনির প্রতাপনগর ফাজিল মাদ্রাসা, প্রতাপনগর ইউনাইটেড একাডেমি ও কল্যাণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কুড়িকাহুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুড়িকাহুনিয়া মহিলা মাদ্রাসা, প্রতাপনগর মহিলা মাদ্রাসা, কল্যাণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, প্রতাপনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের আঙিনা ও কক্ষে পানি থই থই করছে বলে জানান প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন। তিনি বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকায় এমনিতেই পানি জমে ছিল। রবি ও সোমবার অতিবৃষ্টিতে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাতে পানি ঢুকে পড়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, আশাশুনি, তালা, কালীগঞ্জ ও সদর উপজেলার ৬২ বিদ্যালয়ের আঙিনা কিংবা শ্রেণিকক্ষে পানি উঠেছে। তবে কোনো বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ নেই দাবি করে তিনি বলেন, বিকল্প ব্যবস্থায় ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। জেলার অন্য তিনটি উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

সাতক্ষীরা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এক দিনের ভারী বৃষ্টিতে জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস করানো সম্ভব হচ্ছে না। আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ফাজিল ও আল আমিন মহিলা মাদ্রাসা, কালীগঞ্জ মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সাতক্ষীরা সদরের ভোমরা রাশিদা বেগম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ রাখতে হয়েছে। বিকল্প ব্যবস্থায় ক্লাস নেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য এখনো তাঁর কাছে এসে পৌঁছায়নি।