চুয়াডাঙ্গা
অনুমোদনহীন এলপিজি স্টেশন, দুর্ঘটনার শঙ্কা
সদর উপজেলার দুটি এলপিজি স্টেশন লাইসেন্স ছাড়াই স্থাপন করা হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীন বিস্ফোরক পরিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই চুয়াডাঙ্গায় দুটি এলপিজি স্টেশনে দীর্ঘদিন ধরে এলপিজি গ্যাস মজুত ও বিক্রি করা হচ্ছে। এতে যেকোনো সময় গ্যাসাধার ছিদ্র হয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের বোয়ালমারী গ্রামের (সিরাজকান্দি মৌজা) সারমানো পেট্রোলিয়াম লিমিটেড ও আলোকদিয়া ইউনিয়নের দৌলাতদিয়াড় এলাকার মেসার্স সুগন্ধা অটো গ্যাস স্টেশনে অবৈধভাবে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) মজুত করে বিক্রি করা হচ্ছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে গ্যাস মজুত ও তা যানবাহনে সরবরাহ বন্ধে সম্প্রতি আশিকুজ্জামান রাজু ও মীর মুসা ওলিউল্লাহ নামের দুজন ব্যবসায়ী জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীন বিস্ফোরক পরিদপ্তরের বিধিমালাকে উপেক্ষা করে গায়ের জোরে তারা (সারমানো তিনবছর এবং সুগন্ধা ছয়মাস ধরে) এলপিজি ব্যবসা করছে। অবৈধভাবে এলপিজি বিক্রি বন্ধসহ কঠোর তদারকির জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন থেকে জেলা প্রশাসকদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দেশনা অনুযায়ী অবৈধ প্রতিষ্ঠান দুটি বন্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে জানান, অননুমোদিত এলপিজি স্টেশন চালানোর কোনো সুযোগ নেই। প্রতিষ্ঠানের মালিকদেরকে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করার জন্য সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হবে। লাইসেন্স না নিলে বেঁধে দেওয়া সময়ের পর ব্যবসা করতে দেওয়া যাবে না। এরপরও এভাবে ব্যবসা করলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিস্ফোরক পরিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উল্লেখিত দুটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নেই। বিনা লাইসেন্সে গ্যাসাধারে (ট্যাংকিতে) এলপিজি মজুদ এবং যানবাহনে গ্যাস ভর্তি করা তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস বিধিমালা ২০০৪ এর ৮৯, ৯২ ও ১১১–এর লঙ্ঘন এবং উক্ত বিধিমালার বিধি ১২৫ (ক) ও (গ) অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ অপরাধের দায়ে কমপক্ষে দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। এবং অর্থদণ্ড অনাদায়ী থাকলে অতিরিক্ত ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সুগন্ধা অটো গ্যাস স্টেশনটি নিয়ম মেনে গ্যাসাধার স্থাপন করলেও সারমানো পেট্রোলিয়াম লিমিটেড খোলামেলাভাবে গ্যাসাধার স্থাপন করেছেন। এতে যেকোনো সময় গ্যাসাধার ছিদ্র হয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের বিস্ফোরক পরিদপ্তর খুলনার বিস্ফোরক পরিদর্শক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চুয়াডাঙ্গার সারমানো পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের সার্বিক অবস্থা দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। গত বছরের ১৭ নভেম্বর তিনি স্টেশনগুলো পরিদর্শন করেন। এরপর ২২ নভেম্বর তিনি সারমানো পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দিয়ে বলেছেন, নিয়ম না মানলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সারমানোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে সুগন্ধা অটো গ্যাস স্টেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল কালাম বলেন, ‘এলপিজি সরবাহকারী প্রতিষ্ঠানের পরামর্শে পরীক্ষামূলকভাবে স্টেশনটি চালু রাখা হয়েছে। নকশা অনুমোদনসহ প্রয়োজনীয় সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। লাইসেন্স পাওয়ার আগে যদি এলপিজি বিক্রি করা বেআইনী হয়, তাহলে বিক্রি বন্ধ রাখব।’