অভিযানের খবরে বালিহাঁস, ডাহুক, ঘুঘুর মাংস হয়ে যায় দেশি হাঁস-মুরগি
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুর বাজার। সেখানকার বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁয় দিনে রাতে পরিযায়ী পাখিসহ বিভিন্ন পাখির মাংস বিক্রির খবর ছিল পরিবেশকর্মী, বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এবং স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন বাজারে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকবার সফল ও বিফল হয়েছে। কারণ অভিযান শুরুর পরপরই বদলে যায় রেস্তোরাঁর চিত্র। পরিবেশন করা বালিহাঁস, ডাহুক, শামুকখোল, ঘুঘুর রান্না করা মাংস দেশি হাঁস-মুরগি ও কোয়েল পাখির মাংস বলা হতো। এ ক্ষেত্রে রেস্তোরাঁ মালিককে সহযোগিতা করতেন গ্রাহকেরা। তবে এবার পরিবেশকর্মীদের সহায়তায় অভিযান চালিয়ে এ চালাকি ধরে ফেলেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হরিপুর বাজারের তারু মিয়া নামের রেস্তোরাঁয় পরিযায়ী ও দেশি পাখির মাংস বিক্রি করায় পরিচালককে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনের আওতায় ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি মুচলেকা নেওয়া হয়েছে রেস্তোরাঁ পরিচালনা করা ওয়াহিদ মিয়ার কাছ থেকে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জৈন্তাপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিপামনি দেবী।
রিপামনি দেবী বলেন, এর আগেও এ বাজারে অভিযান চালিয়ে একাধিকবার জরিমানা করা হয়েছে। রোববারের অভিযানে জব্দ হওয়া মাংসগুলো কোন কোন প্রজাতির পাখির, তা নিশ্চিত হতে বন বিভাগের পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। রেস্তোরাঁর মালিককে সতর্ক করা হয়েছে। ভবিষ্যতে একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে বেশি জরিমানার পাশাপাশি কঠোর দণ্ড দেওয়া হবে।
অভিযানকালে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজারের বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মির্জা মেহেদি সারোয়ার, রেঞ্জ কর্মকর্তা গোলাম সারোয়ার, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী, র্যাব-৯–এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৌমেন মজুমদার ও পরিবেশকর্মীরা।
অভিযান সূত্রে জানা গেছে, রোববার দুপুর ১২টার দিকে হরিপুর বাজারের তারু মিয়া রেস্তোরাঁয় যান পরিবেশকর্মীরা। এ সময় তাঁরা সাধারণ ক্রেতা সেজে পাখির মাংসের খাওয়ার ফরমাশ দেন। এ সময় রেস্তোরাঁর মালিক তাঁদের বালিহাঁস, ডাহুক, শামুকখোল, ঘুঘু হিসেবে রান্না করা মাংস পরিবেশন করেন। সেগুলো ভিডিও ধারণ করে রাখেন পরিবেশকর্মীরা। আধা ঘণ্টা পরে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সমন্বয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শুরু হলে রেস্তোরাঁর চিত্র বদলে যায়।
রেস্তোরাঁ পরিচালনায় থাকা ওয়াহিদ মিয়া দাবি করেন, পরিবেশন করা ও হোটেলে রান্নার জন্য রাখা মাংসগুলো দেশি হাঁস-মুরগি ও কোয়েল পাখির। তখন পরিবেশকর্মীরা আগে ধারণ করা ভিডিও ভ্রাম্যমাণ আদালতের সামনে হাজির করেন। একপর্যায়ে ওয়াহিদ মিয়া মাংসগুলো পরিযায়ী ও বিভিন্ন পাখির বলে স্বীকার করেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড পুনরাবৃত্তি না করার মুচলেকা দেন। অভিযানে রান্না করা ও রান্নার জন্য কেটে রাখা মাংসগুলো জব্দ করা হয়।
আবদুল করিম চৌধুরী বলেন, সকাল থেকে অভিযান নিয়ে উচ্ছ্বসিত থাকলেও অভিযানের পর কিছুটা মন খারাপ হয়েছে। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে দুর্বলতা রয়েছে। আইনের ফাঁক গলে পরিবেশ ধ্বংসকারীরা বেরিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা নিজেদের বাঁচাতে রান্না করা মাংসগুলো দেশি হাঁস-মুরগি হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছেন। তবে আগেই ভিডিও ধারণ করে রাখায় শেষে স্বীকার করতে হয়েছে। তিনি বলেন, তাঁদের খুব অল্প জরিমানা করা হয়েছে। পরিযায়ী পাখির মাংস বিক্রির রেস্তোরাঁগুলোর একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। তাঁরা সক্রিয় এবং লাভের একটি অংশ পান। অভিযানের পরপরই তাঁরা সক্রিয় হয়ে তাঁদের রক্ষায় নানাভাবে সহযোগিতার চেষ্টা করেছেন।