অভিযানের সময় ইউএনওর গাড়িতে হামলা, কর্মচারী আহত

ভাঙচুর হওয়া সরকারি গাড়ি। শনিবার সন্ধ্যায় বগুড়ার শেরপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে
প্রথম আলো

বগুড়ার শেরপুরে বাঙ্গালী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযানের সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ভাঙচুরে বাধা দিতে গিয়ে মঞ্জুরুল হক নামে ইউএনওর কার্যালয়ের এক কর্মচারী আহত হয়েছেন। শনিবার বিকেল পাঁচটায় উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

শেরপুর থানা-পুলিশ সূত্র জানায়, ইউএনও লিয়াকত আলী সেখ গজারিয়ায় যাওয়ার সময় উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন। এই হামলায় গাড়িটির সামনে-পেছনের কাচ ভাঙচুর হয়েছে। ইউএনওর গাড়িতে হামলা চালানোর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ উপস্থিত হলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। আহত মঞ্জুরুল হককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সূত্রে জানা গেছে।

বাঙ্গালী নদী থেকে যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে এবং বালু উত্তোলনের অবৈধ কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করছে, তারাই এই হামলার ঘটনায় জড়িত।
লিয়াকত আলী সেখ, ইউএনও, শেরপুর, বগুড়া

হামলার ঘটনা নিয়ে ইউএনও লিয়াকত আলী সেখ বলেন, শনিবার বিকেলে তিনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাজার তদারক করছিলেন। এ সময় উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের বাঙ্গালী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সংবাদ পান। এরপর বিকেল পাঁচটায় তিনি সরেজমিনে ঘটনাস্থল গজারিয়া ও পাশের নলডিঙ্গি গ্রামে যান। এ সময় তিনি দেখতে পান, প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে নদী থেকে বালু তুলে অন্যত্র নেওয়া হচ্ছে। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা কর্মচারীদের মাধ্যমে প্লাস্টিকের পাইপগুলো অপসারণের চেষ্টা শুরু করেন তিনি। একপর্যায়ে অন্তত ১০০ নারী-পুরুষ তাঁদের ওপর হামলা করে।

ইট ও লাঠিসোঁটা নিয়ে এই হামলার সময় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন কর্মচারী মঞ্জুরুল হক। কিন্তু তিনি হামলায় আহত হন। এই হামলায় সরকারি গাড়িটির কাচ ভাঙাসহ ব্যাপক ক্ষতি হয়।
ইউএনও অভিযোগ করেন, বাঙ্গালী নদী থেকে যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে এবং বালু উত্তোলনের অবৈধ কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করছে, তারাই এই হামলার ঘটনায় জড়িত। এ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

থানা-পুলিশের বিশেষ দল ওই এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাত আটটায় ছয়জনকে থানায় নেওয়া হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, হামলার ঘটনার পর এই দুই গ্রামের নারী ও পুরুষেরা বাড়িছাড়া। হামলার ঘটনা নিয়ে স্থানীয় অন্তত ১৫ জনের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা বলেন, হামলার ঘটনার সময় তাঁরা ছিলেন না। নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে অন্তত ১০ ব্যক্তি প্রথম আলোকে বলেন, অন্তত দুই বছর ধরে গজারিয়া ও পাশের নলডিঙ্গি গ্রামের পাশে বাঙ্গালী নদী থেকে অবৈধভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু তুলে আসছিল স্থানীয় চারজন। তারাই বিভিন্ন সময় ধরে এই বালু তোলার কর্মকাণ্ডে স্থানীয় কিছু যুবককে নিয়োজিত করেছে। উত্তোলনকারীরা দলে ভারী হওয়ায় অনেকে প্রতিবাদ করলেও বালু তোলা বন্ধ হয়নি।

এদিকে শনিবার রাত পৌনে নয়টায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, থানা-পুলিশের বিশেষ দল ওই এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাত আটটায় ছয়জনকে থানায় নেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় শেরপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, হামলাকারীদের শনাক্ত করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে। গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইউএনওর গাড়িতে হামলা করার ঘটনায় শেরপুর উপজেলা অফিসার্স ক্লাব তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।