অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

অ্যাসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিজ ইন বাংলাদেশ (এডাব) রাজশাহী জেলা শাখা এই মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে সেচের পানি না পেয়ে দুই সাঁওতাল কৃষকের বিষপানে মৃত্যুর প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে নগরের আলুপট্টি মোড়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ডেভেলপমেন্ট এজেন্সিজ ইন বাংলাদেশ (এডাব) রাজশাহী জেলা শাখা এ কর্মসূচির আয়োজন করে। কর্মসূচি থেকে দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।

মানববন্ধনে রাজশাহী খেলাঘরের সভাপতি এফ এম এ জাহিদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক গণেশ মার্ডি, সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেতা এভারিস্ট হেমব্রম, ভূমি অধিকার আন্দোলনের নেতা আফজাল হোসেন, রাজশাহী মানবাধিকার জোটের সদস্যসচিব রাজকুমার শাও, রাজশাহী এডাবের সদস্যসচিব আবুল বাসার, এডাবের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আর কে দত্ত রুপন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ একসময় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল না। কৃষকের ঘামে, চেষ্টায় বাংলাদেশ আজকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। কৃষকেরা দেশের জন্য কী পরিমাণ অবদান রাখে, সেটা করোনার দুই বছরে তাঁরা দেখিয়েছেন। তবে কৃষকদের দিনের পর দিন অবহেলা করা হচ্ছে। কৃষকদেরও এখন বাধ্য হয়ে রাজনীতির ফাঁকফোকর বুঝে সেবা নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কৃষকেরা আরও বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

বক্তারা আরও বলেন, গোদাগাড়ীতে দুই কৃষক কম দুঃখ-কষ্টে নিজেদের জীবন শেষ করে দেননি। তাঁদের হত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সেচব্যবস্থা। একজন কৃষকের খেতের ফসল সন্তানতুল্য। কিন্তু সেই সন্তান যখন পানির অভাবে মারা যেতে থাকে, তখন কৃষক বাবার কীই-বা করার থাকে। এ ঘটনায় শুধু সেচ প্রকল্পের অপারেটর নয়, পুরো বিএমডিএ জড়িত। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের অপসারণ করে বরেন্দ্র অঞ্চলে সেচব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে। সেই সঙ্গে এই দুই কৃষকের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

রাজশাহী মানবাধিকার জোটের সদস্যসচিব রাজকুমার শাও বলেন, দুই কৃষকের মৃত্যুর পর তদন্ত কমিটি হয়েছে। কিন্তু এখানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কাউকে রাখা হয়নি। এটাও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীদের প্রতি অবহেলা। এখানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কেউ থাকলে তদন্ত কমিটির দল তাদের ভাষা বুঝতে পারত, ভুক্তভোগীরা তাদের মনের কষ্ট অভয়ে বলতে পারত, কিন্তু সেটা হয়নি। তবু এ ঘটনায় সরকার দ্রুত এ বিষয়ে নজর দিয়েছে, এটাই অনেক।

এর আগে গত ২৩ মার্চ গোদাগাড়ীর নিমঘটু গ্রামের সাঁওতাল কৃষক অভিনাথ মারানডি (৩৭) ও তাঁর চাচাতো ভাই রবি মারানডি (২৭) বিষ পান করেন। এতে অভিনাথ সেদিনই মারা যান। রবি মারা যান ২৫ মার্চ। পরিবারের দাবি, নলকূপের অপারেটর ও ওয়ার্ড কৃষক লীগের সভাপতি সাখাওয়াত ওই দুই কৃষককে বোরো ধানের জমিতে পানি না দিয়ে হয়রানি করেছেন। এর প্রতিবাদে অভিনাথ ও রবি বিষপানে আত্মহত্যা করেন।

এ নিয়ে দুই পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে দুটি মামলা করা হয়। এরপর ২ এপ্রিল দিবাগত রাতে পুলিশ সাখাওয়াতকে গ্রেপ্তার করে। রোববার তাঁকে আদালতে হাজির করে তিন দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সেদিন আদালত সাখাওয়াতকে কারাগারে পাঠান।

এদিকে ঘটনা তদন্তে গঠিত কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি পানিবণ্টনে সাখাওয়াতের নানা অনিয়ম পেয়েছে। মন্ত্রণালয়ে এ প্রতিবেদন দাখিলও হয়েছে। গভীর নলকূপের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও (বিএমডিএ) আলাদা তদন্ত করলে সাখাওয়াতের অনিয়ম বেরিয়ে এসেছে। গ্রেপ্তারের পর রোববার সাখাওয়াতের নিয়োগ বাতিল করেছে বিএমডিএ।