বরিশালের উজিরপুর উপজেলার আটিপাড়া গ্রামে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন তালুকদার
ছবি: সংগৃহীত

বরিশালের উজিরপুর উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. দেলোয়ার হোসেন তালুকদার ও তাঁর ছেলেকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় চারটি পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। হামলার ঘটনায় আহত পরিবারের সদস্যরা অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। নিহত মুক্তিযোদ্ধার দুই ছেলে ও এক পুত্রবধূ অর্থসংকটে চিকিৎসার অভাবে হাসপাতালে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন।

নিহত মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের অনার্সের শেষ বর্ষের ছাত্রী স্বর্ণা আক্তার বলেন, সন্ত্রাসীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে বাবা ও তাঁর বড় ভাইকে হত্যা করেছে। সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে পঙ্গু হয়ে এখনো হাসপাতালে পড়ে আছেন মেজ ভাই সোহাগ তালুকদার (৩৭), ছোট ভাই জুয়েল তালুকদার (৩৫) ও নিহত বড় ভাইয়ের স্ত্রী রোজিনা বেগম (২৮)। অর্থের অভাবে তাঁদের ঠিকমতো চিকিৎসা হচ্ছে না। চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে না পারায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাঁদের বরিশালে হাসপাতালে এনে রাখা হয়েছে।

স্বর্ণা আক্তার আরও বলেন, ইউএনও ২০ হাজার টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিলেন, যা তিন দিনের ওষুধ কিনতেই শেষ হয়েছে। চিকিৎসা, খাওয়া খরচসহ প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে। এত টাকা কোথায় পাবেন তাঁরা? চিকিৎসার অভাবে দুই ভাই ও এক ভাবি এখন মৃত্যুপথযাত্রী।

নিহত মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেনের শ্যালক সিরাজুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে দিবালোকে বীর মুক্তিযোদ্ধা আমার দুলাভাই ও বড় ভাগনেকে কুপিয়ে হত্যা করল। হামলায় আহত এখনো দুই ভাগনে ও এক ভাগনেবউ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।’ হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও নিঃস্ব হয়ে পড়া পরিবারগুলোকে সহায়তার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানিয়েছেন।

পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, জমি নিয়ে উপজেলার বামরাইল ইউনিয়নের আটিপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন তালুকদারের (৭২) সঙ্গে একই গ্রামের নুরুল ইসলাম (৪৫), মো. জলিল সেপাইয়ের (৫৫) বিরোধ চলে আসছিল। গত ২৯ জুলাই সকালে নুরুল ও জলিলের নেতৃত্বে ২৫ থেকে ৩০ জন সন্ত্রাসী দেলোয়ার হোসেন তালুকদার, তাঁর ছেলে বিপ্লব তালুকদার (৪০), মেজ ছেলে সোহাগ তালুকদার (৩৭), ছোট ছেলে জুয়েল তালুকদার (৩৫) ও বড় পুত্রবধূ রোজিনা বেগমকে (২৮) ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করেন। আহত ব্যক্তিদের বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে দেলোয়ার হোসেন মারা যান।

এ ঘটনায় ছোট ছেলে জুয়েল তালুকদার বাদী হয়ে গত ৩১ জুলাই ৩২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এদিকে হামলায় আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ৭ আগস্ট মারা যান বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেনের ছেলে বিপ্লব তালুকদারও।


নিহত বিপ্লব তালুকদারের বড় মেয়ে কনক আক্তার (১৫)। সে এসএসসি পরীক্ষার্থী।গতকাল রোববার কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটি বলে, ‘বাবাকে ওরা মেরে ফেলল মাকে কুপিয়ে পঙ্গু করেছে। মা হাসপাতালে মৃত্যুপথযাত্রী। বাবার আয়ে আমরা সুখেই ছিলাম। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেছে। আমার মেজ বোন জান্নাত অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী ও ছোট বোন জিনিয়া চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। এখন আমাদের কে খাওয়াবে, কে পড়াবে?’

আহত সোহাগ তালুকদারের স্ত্রী বলেন, ঢাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে আলাদা সংসার খরচ বহন করতেন দুই ভাই সোহাগ ও জুয়েল তালুকদার। হামলায় তাঁরা এখন পঙ্গু হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন। অর্থের অভাবে না চলছে চিকিৎসা, না চলছে সংসার।

উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলী আর্শেদ বলেন, ইতিমধ্যে মামলার প্রধান আসামিসহ এজাহারভুক্ত ছয় আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রধান আসামি সবুজ সেপাই আদালতে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ১৮ জনের নাম প্রকাশ করেছেন। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

আরও পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর ছেলে হত্যা মামলার প্রধান আসামির রিমান্ডের আবেদন