অলিগলির দেয়াল ছেড়ে ঈদ শুভেচ্ছা এখন ফেসবুকে

ফেসবুক
ফাইল ছবি: রয়টার্স

কয়েক বছর আগেও পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এলাকার অলিগলির দেয়ালে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীদের পোস্টার সাঁটানো থাকত। এলাকাবাসীকে শুভেচ্ছা জানাতে এটাই ছিল অন্যতম উপায়। বিষয়টা যেন সংস্কৃতির অংশ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু প্রযুক্তির ছোঁয়ায় তা হারিয়ে যেতে বসেছে। ঈদ উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমনির্ভর হয়ে পড়েছে। প্রায় সবাই শুভেচ্ছা জানানোর কাজ সারছেন ফেসবুকে।

গত দুই দিন সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে কোথাও ঈদ উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো পোস্টার দেখা যায়নি। এমনকি তেমন কোনো ব্যানারও চোখে পড়েনি। ফেসবুকে নিজের নির্বাচনী এলাকার মানুষকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ) আসনের সাংসদ আবদুল আজিজ। তাঁর ফেসবুক পোস্টারে দেখা যায়, সাংসদের ছবিসহ বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি–বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি। এ ছাড়া দলের লোগো ও নির্বাচনী প্রতীক নৌকার ছবি রয়েছে তাতে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের মহামারিতে ঘরে থাকার, সতর্ক থাকার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আজিজ।

ফেসবুকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রায়গঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাদী আলমাজী। তাঁর ফেসবুক পোস্টারে দেখা যায় নিজের ছবিসহ বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সাংসদ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ছবি। ফেসবুকে শুভেচ্ছা জানানোর কারণ জানিয়ে প্রথম আলোকে আলমাজী বলেন, ফেসবুকে যেহেতু সবাই থাকে, তাই শুভেচ্ছা জানালে সবাই খেয়াল করে। সবাই বিষয়টি জানতে পারে।

সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী রাকিবুল আলম মিঞা ফেসবুকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তাঁর পোস্টারে নিজের ছবিসহ দলটির প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদের ছবি স্থান পেয়েছে। একইভাবে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রায়গঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুল ইসলাম, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইকবাল হুসাইন প্রমুখ। রাকিবুল প্রথম আলোকে বলেন, ফেসবুকে যোগাযোগ প্রত্যক্ষ হয়। তাই এভাবে শুভেচ্ছা জানালে সবাই খেয়াল করে।

ঈদের শুভেচ্ছায় পোস্টার ছাপানো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খানিকটা আক্ষেপ প্রকাশ করলেন ছাপা কারখানার ব্যবসায়ীরা। রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া বাজারের হাবিব আর্টের মালিক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও ঈদসহ বিভিন্ন পর্বে পোস্টার ও ব্যানার তৈরি করার ধুম পড়ে যেত। আমরা এসব তৈরি করে দেওয়ার পরে দলের মাঠপর্যায়ের কর্মীরা দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগিয়ে দিতেন, গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ব্যানার টাঙিয়ে দিতেন। এতে আমাদের পাশাপাশি তাঁদেরও ঈদ উপলক্ষে ভালো আয় হতো। কিন্তু এখন ফেসবুকের কারণে আমাদের কদর কমে গেছে।’ একই কথা বলেন আরও দুজন।

স্থানীয় দুটি দৈনিক পত্রিকার সংবাদকর্মী বলেন, দু-তিন বছর আগেও ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে রাজনৈতিক দলের নেতা ও সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা তাঁদের ডাকতেন। এখন ফেসবুকের কল্যাণে সেটি আর তেমন হচ্ছে না। উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও সাবেক অধ্যক্ষ শামসুল হক বলেন, পোস্টার ও ব্যানারের ব্যবহার কমে যাওয়ায় একদিকে ভালো হয়েছে। আগে সবাইকে শুভেচ্ছার এসব পোস্টার-ব্যানার দেখতে হতো। এখন ফেসবুকে শুধু তাঁদের অনুসারীরা এসব দেখেন।