কুড়িগ্রামের রৌমারী
আদালতের নির্দেশনা অমান্য, বালু তুলছেন আ.লীগ নেতা
বালু তোলার চারটি ড্রেজার মেশিনের সঙ্গে অতিরিক্ত ৫ থেকে ১০টি করে শ্যালো মেশিন সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা ও তাঁর পরিবার। এর আগে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ড্রেজার মেশিন বন্ধে আদেশ প্রদান ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এরপরও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা। ভাঙনকবলিত স্থানে বালু উত্তোলন করায় ভাঙছে নদীর তীর, কিন্তু প্রভাবশালী ওই নেতার ভয়ে মুখ খুলছেন না এলাকার লোকজন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ধনারচর এলাকার বাসিন্দা ও রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মো. সুরুজ্জামাল মিয়া ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে পাশাপাশি চারটি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। এসব ড্রেজার মেশিনের সঙ্গে অতিরিক্ত ৫ থেকে ১০টি করে শ্যালো মেশিনে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। দিন-রাত শ্যালো মেশিন আর ভটভটির বিকট শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী।
সূত্র জানায়, এই অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতা সুরুজ্জামাল ও তাঁর দুই ছেলে আজিজুর রহমান ও আবদুল আলিম ভ্রাম্যমাণ চড়াও হন। ঘটনার পর তিনজনকে আটক করে পুলিশ। ধ্বংস করে দেওয়া হয় বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত পাইপ। পরে ড্রেজার মেশিন না চালানোর শর্তে মুচলেকা দিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কিন্তু বালু উত্তোলন বন্ধ না করে উল্টো ড্রেজার মেশিনের সংখ্যা বাড়িয়ে একাধিক স্থানে বালু উত্তোলন ব্যবসা অব্যাহত রেখেছেন তাঁরা।
গত বছর যত্রতত্র অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে রৌমারী আমলি আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আওয়ামী লীগের নেতা সুরুজ্জামাল, তাঁর দুই ছেলে আজিজুর রহমান, আবদুল আলিমসহ ৪২ জন ড্রেজারের মালিকদের বিরুদ্ধে আদেশ জারি করেন। তদন্তে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সত্যতা পেয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এরপর ৪২ জনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। এরপর কিছুদিন বন্ধ থাকে বালু উত্তোলন। কিন্তু আবার স্বরূপে ফিরেছে বালুখোর চক্রটি।
যাদুরচর ইউনিয়নের গোলাবাড়ী আকন্দপাড়ার বালু ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন বলেন, ‘গত বছর আদালতে আত্মসমর্পণ করে বালু না তোলার শর্তে বিজ্ঞ আদালত সবাইকে জামিন দেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা বালু উত্তোলন বন্ধ রেখেছি। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতা সুরুজ্জামাল, তাঁর সন্তানেরাসহ ৫-৬ জন এখনো বালু উত্তোলন করছেন।’
একই এলাকার রহমত আলী বলেন, সুরুজ্জামাল খুবই ক্ষমতাধর। তাঁর কর্মকাণ্ডের বিষয়ে প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো লাভ হয় না। কারণ, তিনি দলের নাম ভাঙিয়ে প্রশাসনের হর্তাকর্তাদের ম্যানেজ করে ফেলেন।
অভিযোগের বিষয়ে সুরুজ্জামাল বলেন, ‘আমার এক শ্যালক গোয়েন্দা কর্মকর্তা। আরেকজন পার্শ্ববর্তী জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ডাকসাইটে সাংবাদিক। আমার বিরুদ্ধে নিউজ-টিউজ করবেন না। খরচপাতি কী লাগবে নিয়া যান। আসেন মিলেমিশে খাই। একাই তো বড়লোক হওয়া যাবে না।’
জানতে চাইলে রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোন্তাছির বিল্লাহ বলেন, ‘এ ধরনের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে কেউ যদি অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করেন, তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ইউএনও মো. আল ইমরান বলেন, যে অভিযোগগুলো এসেছিল সেসব স্থানে বালু তোলা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপরও কেউ যদি ড্রেজার মেশিন চালু করেন, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।