‘আমরা যেহেতু মানুষ, কোনো কাজ করতে গিয়ে ত্রুটি-বিচ্যুতি হতে পারে, এ ক্ষেত্রে আমি প্রত্যাশা করব আপনারা আগে ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো ধরিয়ে দিন। ভুল হয় সংশোধন করার জন্য। আর যদি সংশোধন না করি, তখন অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা আমার ওপর বর্তাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যে আইনগুলো বিভিন্ন আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করছেন, তা আমার ওপরও প্রয়োগ হবে। এটি আমি আনন্দিত চিত্তে মাথা পেতে নেব।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সহ-উপাচার্য হিসেবে যোগদান করে মো. সুলতান-উল-ইসলাম এসব কথা বলেন। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে তিনি আগের সহ-উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহার কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি মো. সুলতান-উল-ইসলামকে চার বছরের জন্য সহ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।
সুলতান-উল-ইসলাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক সমাজ’ ব্যানারে আন্দোলনকারীদের আহ্বায়ক ছিলেন। বিদায়ী উপাচার্য আবদুস সোবহানসহ তাঁর প্রশাসনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি বিষয়ে তিনি বেশ তৎপর ছিলেন।
সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, যে আদর্শ নিয়ে তাঁরা দুর্নীতি-অনিয়ম-স্বজনপ্রীতি ও নিয়োগ-বাণিজ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, সে আদর্শ বাস্তবায়িত হোক, এখন এটাই তাঁর একমাত্র কামনা।
লিখিত বক্তব্যে সাংবাদিকদের উদ্দেশে সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আজ তিনি দায়িত্ব নিচ্ছেন। তাঁর প্রথম কাজ হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ সালের অ্যাক্ট পুনর্বহাল রাখা এবং তা সব ক্ষেত্রে কার্যকর করা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার হোক, সংস্কৃতিচর্চার হোক এবং গবেষণার হোক, এখানে বিজ্ঞানমনস্ক অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল মানুষ সৃষ্টি হোক।
সুলতান-উল-ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের ‘দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক সমাজের’ আহ্বায়ক তিনি ছিলেন। তাঁরা শিক্ষকেরা মিলে নির্যাতন, দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। এটি ছিল একটি আদর্শভিত্তিক আন্দোলন। এই আন্দোলনে তাঁরা বা তিনি যে কথাগুলো বলেছেন, তিনি দায়িত্ব নিয়ে সেই কথাগুলোর বাস্তবায়ন করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন। এটি বাস্তবায়িত হবে ’৭৩ অ্যাক্টের মাধ্যমে।
দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক সমাজের নতুন আহ্বায়ক অধ্যাপক সামাদী
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকসমাজের নতুন আহ্বায়ক হয়েছেন বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ কলাভবনে দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকদের এক আলোচনা সভা শেষে সামাদীকে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ সময় দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন সহ-উপাচার্য ও সদ্য বিদায়ী আহ্বায়ক সুলতান-উল-ইসলামকে অভিনন্দন জানান।
নতুন আহ্বায়ক সফিকুন্নবী সামাদী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা পদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেননি। তাঁরা প্রায় দুই বছর ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, নিয়োগ-বাণিজ্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। তাঁদের এই আদর্শের আন্দোলন চলমান থাকবে। এমনকি তাঁদের নতুন আহ্বায়ক বর্তমানে সহ-উপাচার্যের দায়িত্ব পেয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধেও যদি অনিয়মে সহযোগিতার অভিযোগ পাওয়া যায়, তাঁর বিরুদ্ধেও আন্দোলন চলবে। কাউকে একবিন্দু ছাড় দেওয়া হবে না।