আবারও হাত চালালেন তিনি

বিভিন্ন সময়ে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে একাধিক ব্যক্তির গায়ে হাত তোলার অভিযোগ রয়েছে সংসদ সদস্য হাচানুর রহমানের বিরুদ্ধে।

শওকত হাচানুর রহমান

এবার এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কলার চেপে ধরে কিল-ঘুষি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমানের বিরুদ্ধে। গত শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে বরগুনার পাথরঘাটা সদর ইউনিয়নের হরিণঘাটা গ্রামে একটি সালিসে শতাধিক মানুষের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী ফোরকান হাওলাদার পাথরঘাটার বাদুরতলা বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হরিণঘাটা গ্রামের বাসিন্দা। ঘটনার পর থেকে ফোরকান হাওলাদার পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে অভিযোগ করেছেন ফোরকান হাওলাদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এমপি (সংসদ সদস্য) মহোদয় যা করছে, সে জন্য আমাদের মতো গরিব মানুষের রাগ করলে কোনো কাজ হবে? শত শত মানুষের সামনে সে আমার গায়ে হাত দিছে। তার ক্ষমতা আছে, সে আমার গায়ে হাত দিছে। এ বিচার আমি আল্লাহর কাছে দিলাম।’

বিভিন্ন সময়ে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে একাধিক ব্যক্তির গায়ে হাত তোলার অভিযোগ রয়েছে সংসদ সদস্য হাচানুর রহমানের বিরুদ্ধে। তাঁর কর্মকাণ্ড নিয়ে ৮ মে ‘সাংসদ হাচানুরের কাজকর্মে “লজ্জিত” এলাকার মানুষ’ শিরোনামে প্রথম আলোর প্রথম পাতায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

শনিবারের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সালিস বৈঠকই তো হয়নি, তাহলে মারধরের বিষয় আসে কেন? আর যিনি অভিযোগ করছেন তাঁকে (ফোরকান) মারধর করা হয়েছে, কেন মারধর করা হয়েছে, সে বিষয়টি কি তিনি উল্লেখ করেননি?

পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাবির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘হরিণঘাটায় সংসদ সদস্যের হাতে মারধরের ঘটনাটি আমি শুনেছি। এ মারধরের ঘটনা অনৈতিক। এভাবে কোনো ব্যক্তিকে কিল-ঘুষি, চড়থাপ্পড় দেওয়া ফৌজদারি অপরাধ। তবে সংসদ সদস্যের এ অপরাধের কোনো দায় আওয়ামী লীগ নেবে না। এ ঘটনা তাঁর ব্যক্তিগত।

ওই বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, হরিণঘাটা গ্রামের দুই প্রতিবেশী ফোরকান হাওলাদার ও সোহেল রানার মধ্যকার এক বছরের বেশি সময় ধরে বিরোধ চলে আসছে। শনিবার বিকেলে সেই বিরোধ নিয়ে আয়োজিত সালিসে যান সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান। তিনি দুই পক্ষের কথা শোনার একপর্যায়ে ফোরকান হাওলাদারের কলার চেপে ধরে পাঁচ–ছয়টি চড়থাপ্পড় ও কিল-ঘুষি দেন। পরে প্রাণে বাঁচতে ফোরকান দৌড় দিয়ে পালানোর চেষ্টা করলে সংসদ সদস্যের সঙ্গে থাকা এক ব্যক্তি প্লাস্টিকের একটি চেয়ার ফোরকানের দিকে ছুড়ে মারেন। এ সময় আরও কয়েকজন ফোরকানকে কিল–ঘুষি মারেন। একপর্যায়ে ফোরকান দ্রুত তাঁর ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। এ অবস্থায় চলে আসার সময় ফোরকানকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন হাচানুর রহমান।

এভাবে কোনো ব্যক্তিকে কিল-ঘুষি, চড়থাপ্পড় দেওয়া ফৌজদারি অপরাধ। তবে সংসদ সদস্যের এ অপরাধের কোনো দায় আওয়ামী লীগ নেবে না।
মো. জাবির হোসেন, পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক

এর আগে ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট পাথরঘাটা স্টেডিয়ামে পাথরঘাটার মৎস্য ব্যবসায়ী ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলামকে মারধর করেন সংসদ সদস্য হাচানুর। তাঁর বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি বরগুনা সড়ক ও জনপথের (সওজ) কার্যসহকারী তাইজুল ইসলামকে মারধর ও ঝাড়ুপেটা, ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি পাথরঘাটার চরদুয়ানী বাজারে স্লুইসঘাট এলাকায় এক নারী আইনজীবীর শ্লীলতাহানি ও ওই আইনজীবীর এক ঘনিষ্ঠজনকে মারধর, ২০১৮ সালের ১৫ আগস্ট চরদুয়ানী বাজারে তাঁতী লীগ নেতা ইদ্রিস চৌধুরীকে কিল-ঘুষিসহ মারধর, ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মচারী নুরুল ইসলামকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে। ২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর পাথরঘাটা উপজেলার গহরপুর গ্রামের সালিসে এক গৃহবধূকে জুতাপেটা ও মাথায় বিষ্ঠা ঢেলে দেওয়ার নির্দেশ দেন হাচানুর রহমান। পাথরঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালে ২০১০ সালের ৮ জানুয়ারি এক সালিসে বিচারপ্রার্থী এক নারীকে বেধড়ক বেত্রাঘাতের অভিযোগও রয়েছে।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তিনি (হাচানুর রহমান) আমাকে ঠুনকো অজুহাতে গত বছর প্রকাশ্যে মারধর করেছেন। এখনো তিনি নানা মাধ্যমে আমাকে হুমকি দিচ্ছেন। শনিবার হরিণঘাটার ফোরকান হাওলাদারের মারধরের ঘটনার পর পাথরঘাটা শহরে শেখ রাসেল স্কয়ারে শওকত হাচানুর রহমানের লোকজন আমাকে তাড়া করেন।’

সংসদ সদস্য হাচানুরের একের পর এক অনভিপ্রেত ঘটনার ঘটনায় বিব্রত স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও পাথরঘাটা উপজেলার বাসিন্দা সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘একজন সংসদ সদস্য সালিসের নামে প্রকাশ্যে মারধর করবেন, এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আওয়ামী লীগ এ শিক্ষা আমাদের কোনো দিন দেয়নি। তবে দলীয় সংসদ সদস্য হিসেবে ওই ঘটনায় আমরা বিব্রত। ওই ঘটনার দায়ভার তাঁর ব্যক্তিগত।’