আবার মেলার উৎসবে মেতেছে ২৭৮ বছরের পুরোনো মন্দির
শরীয়তপুর পৌরসভার বিলাসখান শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী মাতা ঠাকুরনী মন্দিরটি ২৭৮ বছরের পুরোনো। বৈশাখ উপলক্ষে প্রতিবছর এ মন্দিরে মেলা বসার ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। তবে করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই বছর এ ঐতিহ্যে ছেদ পড়ে। করোনা পরিস্থিতি এর মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আসায় মন্দিরের প্রাঙ্গণে আবারও বসেছে মেলা। উৎসবে মেতেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। পূজা-অর্চনায় বিশ্ববাসীর মঙ্গল কামনা করছে তারা।
স্থানীয় লোকজন জানান, শরীয়তপুর পৌরসভার ২ নন্বর ওয়ার্ডের বিলাসখান গ্রামে বাংলা ১১৫১ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী মাতা ঠাকুরনীর মন্দির। ওই মন্দিরের প্রাঙ্গণে প্রতিবছর পূজা-অর্চনার পাশাপাশি হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী পয়লা বৈশাখে মেলা বসে। ২০২০ সালে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে মেলা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুধু পূজা-অর্চনা করেছে পুণ্যার্থীরা। এ বছর করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমে আসার কারণে মন্দির কমিটি আবার মেলার আয়োজন করেছে।
আজ শুক্রবার সকালে মন্দির প্রাঙ্গণে মেলার উদ্বোধন করেন শরীয়তপুর সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনদীপ ঘরাই। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এনডিসি সাইফুল ইসলাম, পৌরসভার কাউন্সিলর বিল্লাল হোসেন। মেলা চলবে সোমবার পর্যন্ত। এ বছর রমজানের কারণে বিকেল পাঁচটার মধ্যে মেলার কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে।
প্রথম দিন পুণ্যার্থীরা কালীপূজা, মহাদেবপূজা ও শিতলাপূজা দেওয়ার জন্য মন্দির প্রাঙ্গণে জড়ো হয়। মেলায় শিশুদের বিনোদন দেওয়ার জন্য বিভিন্ন খেলার আয়োজন রাখা হয়েছে। মাটির খেলনা, শোপিচ, তৈজসপত্র, গ্রামীণ ঐতিহ্যের নানা সামগ্রীর পসরা নিয়ে বসেছেন দোকানিরা।
মেলায় আসা সন্ধ্যা রানী মণ্ডল বলেন, বিয়ের পর থেকে তিনি প্রতিবছর এ মন্দিরে এসে পূজা-অর্চনা দিয়ে পরিবারের মঙ্গল মামনা করেন। মেলা থেকে বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয় করে বাড়িতে ফেরেন। দুই বছর ধরে প্রাণের এ উৎসবে মিলিত হতে পারেননি তিনি। আবার এ উৎসবে মিলিত হতে পেরে আনন্দ লাগছে তাঁর।
মেলায় মসলার দোকান নিয়ে বসা শান্তি রঞ্জন দাস প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর মেলায় এ অঞ্চলের মানুষের ঢল নামে। মানুষের সংসারের নানা প্রয়োজনীয় জিনিস মেলা থেকে ক্রয় করেন তাঁরা। করোনার কারণে দুই বছর মেলা বন্ধ ছিল। এ বছর আবার মেলা বসায় তাঁরা খুব খুশি। তবে রোজার কারণে মেলায় কিছুটা বিধিনিষেধ মেনে চলতে হচ্ছে।
শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী মাতা ঠাকুরনীর মন্দির কমিটির সভাপতি শ্রীকৃষ্ণ বণিক বলেন, অনেক রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ২৭৮ বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর উৎসব ও মেলা হয়নি। এ বছর মানুষ প্রাণ খুলে পূজা-অর্চনায় যোগ দিচ্ছে। শামিল হয়েছে উৎসবে। জমে উঠেছে বাঙালির সংস্কৃতির মেলা।
ইউএনও মনদীপ ঘরাই বলেন, মন্দিরটি অনেক পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী। এত পুরোনো মন্দির সচরাচর দেখা যায় না। দুই বছর পর এলাকার মানুষ মন্দিরে উৎসবে মিলিত হয়েছে। মেলায় আসছে। তবে মেলা রমজানের সংযমে চলছে। সে সংযমের প্রতি সম্মান দেখিয়ে মেলার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মন্দির কমিটিকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।