‘আমার জীবনে বাপু অ্যারাম ঝড় দেকিনি’
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় কালবৈশাখীতে কালিদাসপুর, হারদী ও ডাউকি ইউনিয়নের দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। আজ শনিবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে শুরু হওয়া বৃষ্টি প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলে। এ সময় আলমডাঙ্গা-কুষ্টিয়া মহাসড়কের দুই পাশের গাছ ভেঙে পড়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
ঝড়ের পর উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সড়ক থেকে গাছ অপসারণ শুরু করেন। টানা সাত ঘণ্টা চেষ্টার পর বেলা সাড়ে ১১টায় চুয়াডাঙ্গা-কুষ্টিয়া সড়কে যান চলাচল শুরু হয়।
কালিদাসপুরের রেল জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আবুল কাশেম (৬০) বলেন, ‘আমার জীবনে বাপু অ্যারাম (এ রকম) ঝড় দেকিনি। ফজরের নামাজ পড়ে সালাম ফিরাতি ফিরাতি আমার ঘরের চাল উড়ে কনে গ্যালো জানিনে। আনোয়ারের ঘরের চাল উড়ে আইসে আমার বাড়ির উটোনে (উঠানে) পড়ল। চোকির (চোখের) পলকে মনে হলো গজব নাইমে আইসলো।’
কালিদাসপুর ইউনিয়নের পারকুলা বাজারের শতবর্ষী বটতলায় প্রায় ২০ বছর ধরে চা–দোকান করে আসছেন ওই গ্রামের নবীছদ্দিন (৬০)। ঝড়ের সময় তিনি বটগাছের নিচে নিজের দোকানে ছিলেন। যে দিকে দোকান, ঠিক তার বিপরীত দিকে শতবর্ষী গাছটি উপড়ে পড়েছে। নবীছদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফজরের নামাজ পড়ে আইসে দুকান খুলে চার (চায়ের) পানি আকায় (চুলা) দিলাম। পরপরই অ্যাট্টা গরম বাতাইস আইসলো। ইরপর ঘূর্ণি দিয়ে ঝড় আইসে বটগাছসহ আশপাশের বেশ কডা বাড়ি তচনচ কইরে দিয়ে গেল। আমি সারা জীবনে অ্যারাম ভয় পাইনি।’
ঝড়ের পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে জানান, ঝড়ের আঘাতে আলমডাঙ্গার তিনটি ইউনিয়নের দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অর্ধশতাধিক বড় গাছ উপড়ে যাওয়ার পাশাপাশি অসংখ্য গাছের ডালপালা ভেঙে পড়েছে।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘সরেজমিনে বেশ কয়েকটি বাড়ি দেখেছি। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করছি। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনে শিগগিরই আর্থিক সহযোগিতাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’