আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দখলের অভিযোগ

রহম মোল্লার নামে বরাদ্দ হওয়া ঘরে বাস করছেন মকবুল শেখের পরিবার। তবে মকবুলের জমিজমা আছে।

পাবনার সাঁথিয়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরটি দখল করে রাখা হয়েছে। আফড়া গ্রামে গত বৃহস্পতিবার
প্রথম আলো

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর জোর করে দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সচ্ছল এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ফলে ঘরটি বরাদ্দ পাওয়া ভূমিহীন ব্যক্তি পরিবারসহ সেখানে উঠতে পারছেন না। উপজেলার করমজা ইউনিয়নের আফড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

প্রশাসন সূত্র ও স্থানীয় লোকজন বলেন, সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় আফড়া গ্রামের সরকারি জায়গায় ভূমিহীনদের জন্য চারটি ঘর নির্মাণ করা হয়। এবারের ঈদুল ফিতরের উপহার হিসেবে ঘরগুলো চারটি ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরিবারগুলোর প্রধানের নামে ২ শতাংশ জায়গাসহ ঘরের কাগজপত্র ইতিমধ্যেই রেজিস্ট্রি হয়েছে। যে চারটি পরিবার ঘর বরাদ্দ পেয়েছে, এর মধ্যে রহম মোল্লার পরিবারও রয়েছে। নিজের কোনো জায়গা–জমি না থাকায় তিনি আফড়া গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় কুঁড়েঘর তুলে বাস করেন।

এদিকে যে সরকারি জায়গায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে বাস করতেন মকবুল শেখ। তাঁর দাবি, প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে ঘর দেওয়া হবে বলে কথা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বরাদ্দের তালিকায় তাঁর নাম আসেনি। তাই তিনি প্রকল্পের একটি ঘরে পরিবার নিয়ে থাকছেন।

তবে স্থানীয় লোকজন বলেন, মকবুল শেখ সরকারি জায়গায় ঘর তুলে বাস করলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি ভূমিহীন নন। উপজেলার আফড়া গ্রামে তাঁর কৃষিজমি রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর পরিবার বেশ সচ্ছল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রহম মোল্লার নামে বরাদ্দ হওয়া ঘরে বাস করছেন মকবুল শেখের পরিবার। ঘরের পাশেই রয়েছে মকবুল শেখের ছেলের নির্মাণ করা ৩৬ ফুট লম্বা একটি আধা পাকা ঘর। তবে সেই ঘরও সরকারি জায়গায়। মকবুল শেখের স্ত্রী সাজেদা খাতুন বলেন, ‘আমাগরে কুনু জায়গা-জমি নাই। তাই কুনু জায়গায় যাওয়ার উপায় না থাকায় এই ঘরে আইস্যা আশ্রয় নিছি।’

তবে প্রতিবেশীরা বলেন, মকবুল শেখের কৃষিজমি রয়েছে। এই জমির কিছু অংশ কয়েক মাস আগে তিনি বিক্রি করেছেন।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রহম মোল্লা বলেন, ঘর বরাদ্দের পর পরিবারসহ তিনি সেখানে উঠতে গিয়ে দেখেন তাতে মকবুল শেখের পরিবার বাস করছে। এ সময় মকবুল শেখের পরিবারের লোকজন তাঁর পরিবারের লোকজনকে গালাগালি ও হুমকি-ধমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেন। এর পর থেকে তিনি ঘরের দখল পাওয়ার আশায় উপজেলা প্রশাসন, ইউপি চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন কার্যালয়ে ধরনা দিয়ে ফিরছেন।

রহম মোল্লা বলেন, ‘আমার জায়গা-জমি কিছুই নাই। সরকারি জায়গায় ভাঙাচোরা ঘরখান তুইল্যা ইট্টুকু জায়গার মধ্যে ছয়-সাতজন থাকি। উপজেলার থ্যা কয়া দিছে আমার নামে ঘর রেজিস্ট্রি হইছে। কিন্তু সেই ঘরে উঠপ্যার গেলি মকবুল শেখের লোকজন মারব্যার আসে।’

উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, তাঁরা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, মকবুল সচ্ছল। তাঁর জমিজমা ও নগদ টাকা রয়েছে। সব মিলিয়ে তিনি কোনোভাবে আশ্রয়ণের ঘর পাওয়ার যোগ্য নন। তাই শিগগিরই তিনি গিয়ে রহম মোল্লাকে ঘর বুঝিয়ে দেবেন।