আড়াই মাসে ১ শতাংশ ধানও সংগৃহীত হয়নি

গত বছরের ১৫ নভেম্বর ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। প্রতি কেজি ধান ২৭ ও চাল ৪০ টাকা দরে কেনা হচ্ছে।

পরিবহনের খরচসহ গুণগত মান যাচাইয়ের জটিলতার কারণে রংপুরের বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদামে ধান বিক্রিতে অনীহা দেখাচ্ছেন কৃষকেরা। এ কারণে ৮২ দিনে লক্ষ্যমাত্রার এক শতাংশ ধানও সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্যগুদাম কর্তৃপক্ষ।

সরকারি মূল্য বাজারের মূল্যের প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় কৃষকেরা খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে আসছেন না। সরকারি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে তারাগঞ্জ খাদ্যগুদামে ২ হাজার ৯৫২ মেট্রিক টন চাল, ৬৯৭ মেট্রিক টন ধান এবং বদরগঞ্জে ১ হাজার ১৮৩ মেট্রিক টন ধান ও ৯৭৬ মেট্রিক টন চাল কেনার কথা।

গত বছরের ১৫ নভেম্বর সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতি কেজি ধান ২৭ ও চাল ৪০ টাকা দরে কেনা হচ্ছে। কিন্তু গতকাল শনিবার পর্যন্ত ৮২ দিনে বদরগঞ্জ খাদ্যগুদামে মাত্র ৬ টন ও তারাগঞ্জে ৩ টন ধান কিনতে পেরেছে খাদ্য বিভাগ। দুই উপজেলার বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি কেজি আমন ধান ২৫ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে।

খাদ্যগুদাম সূত্রে জানা যায়, নির্দেশনা অনুযায়ী ওই দুই উপজেলার কৃষকেরা অ্যাপের মাধ্যমে নাম নিবন্ধন করেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে লটারির মাধ্যমে নিবন্ধিত কৃষকদের নির্বাচন করা হয়। মূলত তাঁরাই গুদামে ধান বিক্রি করতে পারবেন।

জানা গেছে, চলতি মৌসুমে গুদামে ধান বিক্রি করতে বদরগঞ্জে অ্যাপের মাধ্যমে ১ হাজার ১৭৩ ও তারাগঞ্জে ২ হাজার ১২০ জন কৃষক নিবন্ধন করেন। তাঁদের মধ্যে থেকে লটারি করে বদরগঞ্জে ৩৯০ ও তারাগঞ্জে ২৩১ জন কৃষককে নির্বাচন করা হয়।

বদরগঞ্জ খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ধানের সরকারি দাম বাজারের দামের প্রায় কাছাকাছি। এ কারণে কৃষকেরা গুদামে ধান বিক্রি করতে আসছেন না। তবে চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।

খাদ্যগুদামোত ধান দিবার গেইলে খাজনার চাইতে বাজনা বেশি। ধান উটাইতে লেবাররা নেয় ৫০০ টাকা। আরও খরচ আছে।
সাদ্দাম হোসেন, কৃষক, বুড়িরহাট গ্রাম

তারাগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, নিয়ম মেনে গুদামে ধান বিক্রি করতে বর্তমানে কৃষকের খরচ বেশি পড়ছে। সরকারি দামের চেয়ে বাজারে দাম বেশি পাওয়ায় কৃষকেরা ধান গুদামে আনছেন না। এ কারণে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না।

বদরগঞ্জের আমরুলবাড়ি গ্রামের কৃষক আজারুল ইসলাম (৩২) বলেন, ‘ধান শুকি নিয়া গুদামোত গেইলেও কয় মিটার পাস হয় নাই। তখন ধান ঘুরি ধরি বাড়িত আইসপের নাগে। তাতে পরিবহন খরচ বাড়ে। তার চাইতে বাজারোত নিয়া জায়া বেচা ভালো।’

বদরগঞ্জের বুড়িরহাট গ্রামের কৃষক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘খাদ্যগুদামোত ধান দিবার গেইলে খাজনার চাইতে বাজনা বেশি। এক টন ধান গুদামোত উটাইতে ওইখানকার লেবাররা নেয় ৫০০ টাকা। ভ্যান ভাড়া যায় ৬০০ টাকা। তার ওপর আরও আছে। গরিব কৃষকের জন্য খাদ্যগুদামের চায়া বাজারোত ধান বেচা ভালো।’