বুড়িমারী স্থলবন্দর
ইয়ার্ড শেডে চোরের উপদ্রব
বন্দরের দেয়াল ঘেঁষে পণ্যবোঝাই ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে। রাতে দেয়ালের ফাঁকা স্থান দিয়ে পাইপ ঢুকিয়ে চোরেরা বস্তা থেকে পণ্য চুরি করে।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ইয়ার্ড শেড থেকে আমদানি করা মালামাল প্রতিদিন কোনা না কোনোভাবে চুরি ও ছিনতাই হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে আমদানিকারকেরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বন্দরে এখন বহিরাগতদের অবাধ বিচরণ। ভারতীয় ট্রাক থেকে পণ্য খালাস ও বাংলাদেশি ট্রাকে তা বোঝাই করার সময় বহিরাগতরা পণ্য চুরি ও ছিনতাই করেন। বেশির ভাগ চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাতে। এ অবস্থায় বন্দরে নিরাপত্তায় নিয়োজিত বেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি ও পুরো বন্দর এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার দাবি ব্যবসায়ীদের।
বন্দরে পচনশীল পণ্য খালাসের জন্য একটি ইয়ার্ড শেড আছে। প্রতিদিন তিন থেকে চার শতাধিক ট্রাকের পণ্য খালাস ও বোঝাই করা হয় এই বন্দরে। ইয়ার্ড শেডে ভারত, ভুটান থেকে আনা চাল, ভুট্টা, গম ও ফল ট্রাক থেকে ট্রাকে খালাস করা হয়।
গত শনিবার বুড়িমারী স্থলবন্দর ঘুরে দেখা গেছে, চারদিকে ১২ ফুট উঁচু দেয়াল রাতে বাতি জ্বালিয়ে উজ্জ্বল করে রাখা হয়েছে। প্রবেশ ও বের হওয়ার চারটি ফটকে পাহারারত বন্দর কর্তৃপক্ষের বেসরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। বন্দরের কয়েকজন শ্রমিক জানান, দেয়াল ঘেঁষে লাগানো গাছের ডাল ইয়ার্ড শেড এলাকায় পড়েছে। সে ডাল বেয়ে চোরের দল ভেতরে প্রবেশ করে। এ ছাড়া, দেয়াল ঘেঁষে ভুট্টাবোঝাই ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকে। দুটি দেয়ালের মধ্যের অংশে ছয় ইঞ্চির মতো ফাঁকা স্থান আছে। এই ফাঁকা স্থান দিয়ে পাইপের মাধ্যমে অভিনব কৌশলে চোরেরা ভুট্টার বস্তা থেকে ভুট্টা চুরি করে।
স্থলবন্দরের মেসার্স এ এস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী জিল্লুর রহমান বলেন, বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন পণ্য রাখার নির্ধারিত এলাকা থেকে পণ্য চুরি ও ছিনতাই কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ব্যবসায়ীরা এ নিয়ে চরম শঙ্কার মধ্যে আছেন।
বন্দরসংশ্লিষ্ট আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুক্রবার রাত ১২ থেকে ১টার মধ্যে পণ্য রাখার নির্ধারিত শেড এলাকার ভেতর ছিনতাইকারীদের একটি দল প্রবেশ করে। ভুট্টা বহনকারী একটি গাড়ি থেকে ১০টি বস্তা নিয়ে যেতে থাকে ছিনতাইকারীদের দলটি। ওই গাড়ির চালক (ভারতীয়) টের পেয়ে বাধা দিলে ছিনতাইকারীরা বস্তা ফেলে চলে যায়। চালক গাড়ির হর্ন বাজিয়ে চিৎকার করতে থাকলে আশপাশে থাকা অন্য চালকেরা এগিয়ে যান। তাঁরা ছিনতাইকারী দলের এক সদস্যকে আটক করলেও ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তিনিও পালিয়ে যান।
এই ঘটনার পরদিন বন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট সাইফুর রহমান। পরে বন্দরের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বন্দর এলাকা থেকে মুকুল হোসেন (২২) নামে একজনকে আটক করেন। মুকুলের বাড়ি বুড়িমারী ইউনিয়নে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, ভুট্টার বস্তা চুরি করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টার পাশাপাশি গত বছরের ১৫ নভেম্বরের একটি ঘটনা ঘটেছে। সেদিন সন্ধ্যায় কেএস সিন্ডিকেট প্রাইভেট লিমিটেডের পণ্যবাহী ভুট্টার ট্রাক থেকে দুই বস্তা (৫০ কেজি ওজনের) নিয়ে যায় অজ্ঞাত চোরের দল। তখন কোম্পানির প্রতিনিধি চোরদের আটকাতে গেলে উল্টো চোরেরা মারপিট করে মালামাল নিয়ে চম্পট দেয়। বন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষীদের কয়েক সদস্য এগিয়ে গেলেও চুরি যাওয়া পণ্য উদ্ধার ও চোরকে আটকাতে পারেননি।
কেএস সিন্ডিকেট প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন, এ বন্দরে প্রত্যেক ব্যবসায়ীরই বিভিন্ন পরিমাণে পণ্য চুরি হচ্ছে। স্থলবন্দরে নিরাপত্তায় নিয়োজিত সদস্য থাকলেও ব্যবসায়ীরা নিরাপদ নন। অবস্থা এমন হলে মানুষ কীভাবে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ব্যবসা করবে!
পণ্য চুরি হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা শোনান বুড়িমারী স্থলবন্দরে আলাল গ্রুপের প্রতিনিধি পাপ্পু হোসেন। তিনি বলেন, সপ্তাহখানেক আগে ভারতীয় ট্রাক থেকে গমের বস্তা খালাস করে বাংলাদেশি ট্রাকে তোলার সময় ৫০ কেজি ওজনের একটি বস্তা ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয়। ছিনতাইকারীকে আটকাতে গেলে উল্টো ধাক্কা দিয়ে বস্তা ফেলে চলে যায়। এভাবে তো ব্যবসা করা সম্ভব নয়।
এসব বিষয়ে স্থলবন্দরের কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) রুহুল আমীন বলেন, চুরির ঘটনা ঘটেছে সত্য। তাঁরা দ্রুত ব্যবস্থাও নিচ্ছেন। ছিনতাইকারীরা মূলত দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করে। চারদিকে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।