ঈদের আগের দিন দৌলতদিয়ায় ঘরমুখী মানুষের ঢল
পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে শহর ছেড়ে আসা ঘরমুখী মানুষের ঢল নেমেছে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে। ঈদের আগের দিন আজ মঙ্গলবার দৌলতদিয়ার লঞ্চ ও ফেরিঘাটে রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চল ছেড়ে আসা মানুষের ঢল নামে। সকালে কিছুটা স্বাভাবিক পরিস্থিতি থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় অবস্থান করে দেখা যায়, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে দুই কিলোমিটারের বেশি লম্বা লাইনজুড়ে লোকাল বাসের সারি। এ ছাড়া কিছু পণ্যবাহী গাড়ি নদী পারের অপেক্ষায় রয়েছে। লোকাল বাসগুলো রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চল ছেড়ে আসা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী যাত্রী বহনের জন্য অপেক্ষা করছে। ফেরি থেকে নেমে আসা যাত্রীরা এসব লোকাল বাসে করে রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, যশোর ছেড়ে যাচ্ছে।
লঞ্চঘাটে দেখা যায়, মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি লঞ্চে ধারণক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ কখনো তিন গুণ যাত্রী বহন করে আসছে। লঞ্চে কর্মরত ব্যক্তিরা ঈদের সময় বাড়তি চাপ থাকেই বলে জানান। ফেরিঘাটে পাটুরিয়া থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি ফেরিতে অতিরিক্ত মোটরসাইকেল এবং যাত্রী পার হয়ে আসছে। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে শহর ছেড়ে আসা মানুষ শেষ মুহূর্তে ছুটে চলছে। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে সকাল থেকে মানুষ আসছে। সকালে ভারী বৃষ্টি থাকায় কিছুটা ভিড় কম ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে আবহাওয়া অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এলে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে।
দৌলতদিয়ার ৫ নম্বর ফেরিঘাট এলাকার দোকানি আবদুল ব্যাপারী বলেন, ভোর থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির সময় শুধু ব্যক্তিগত গাড়ি, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলের সঙ্গে পরিবহন পারাপার হতে দেখা যায়। এ সময় খোলা খুচরা যাত্রীসংখ্যা অনেকটা কম পারাপার হয়। সকাল ৯টার পর থেকে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে আবহাওয়া অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এলে সব ধরনের গাড়ির সঙ্গে যাত্রীরাও আসতে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে মানুষের ঢল নামতে থাকে।
ঢাকার কারওয়ান বাজার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সোয়েব হাসান পরিবার নিয়ে ঈদ করতে ব্যক্তিগত গাড়িতে গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী যাচ্ছেন। বৃষ্টির কারণে পথে তেমন কোথাও যানজটের শিকার না হয়ে অনেকটা নিরিবিলি ফেরিতে ওঠেন। দৌলতদিয়া ঘাট অতিক্রমকালে বলেন, অনেকটা স্বাভাবিক পরিস্থিতে বাড়ি যাচ্ছি। পথে কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। এমনকি ফেরিতে ব্যক্তিগত গাড়ির সঙ্গে যাত্রীদের ভিড় ছিল।
সাভারের পোশাক কারখানার বস্ত্র প্রকৌশলী রাকিবুল হক ঘাটে ভিড় এবং যানজট এড়াতে ভোরে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর উদ্দেশে রওনা করেন। সকাল ৯টার দিকে গোয়ালন্দে আলাপকালে বলেন, ‘ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে খুব সকালেই রওনা হয়েছি। বৃষ্টির মধ্যে সময় নিরিবিলি আসতে পেরেছি। বৃষ্টি না হলে হয়তো অনেক ভিড়ে পড়তে হতো।’
ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে ফরিদপুর মধুখালী যাচ্ছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এনামুল হক। ঘাটে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘ভেবেছিলাম সবাই তো আগেভাগেই বাড়ি চলে গেছে। এ ছাড়া খুব সকাল থেকেই প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি হচ্ছে। তাই বৃষ্টির কমার পর সকাল ৯টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে রওনা করি। বেলা ১১টার দিকে পাটুরিয়া ঘাটে এসে ফেরিতে উঠতে গিয়ে ভিড়ে পড়ে যায়। এত মানুষের ভিড়ে ফেরিতে উঠতে অনেক বেগ পেতে হয়। ফেরিতে ওঠার পর কোথাও দাঁড়ানোর জায়গাটুকু পর্যন্ত ছিল না। এত ভিড়ের মধ্যে পড়ে আমার তো মনে হয়েছে সবাই করোনাকে সঙ্গে করে বাড়ি ফিরছি।’
ঈদে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার নির্বিঘ্ন করতে গোয়ালন্দ ঘাট থানা-পুলিশ বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছে। গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল তায়াবীর বলেন, সবাই পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারলেও পুলিশের সে সুযোগ নেই। যানবাহন এবং যাত্রী যাতে নির্বিঘ্নে পারাপার হয়, এ জন্য সব পুলিশ সদস্য কাজ করে যাচ্ছেন।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিন বলেন, শেষ মুহূর্তে ঈদ করতে সবাই শহর ছেড়ে গ্রামে ছুটছে। ঈদ শেষে এসব মানুষ আবার যখন ফিরবে, তখন দৌলতদিয়া ঘাটে পুনরায় ভিড়ের মুখে পড়বে। সব কটি ফেরি সচল থাকলে আল্লাহর রহমতে তেমন সমস্যায় পড়তে হবে না।