ঈশ্বরগঞ্জে বিজয়ী সদস্য প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় আহত তরুণের মৃত্যু

পাভেল মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নে নির্বাচন–পরবর্তী সহিংসতায় আহত এক যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। নিহত তরুণের নাম পাভেল মিয়া (২২)। তিনি ওই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক নুরুল আমীনের ছেলে। ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে নুরুল আমীনও আহত হয়েছেন।

গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, সপ্তম ধাপের গত সোমবার ইউপি নির্বাচনের পরদিন গতকাল মঙ্গলবার সকালে দুই পক্ষের সংঘর্ষে পাভেল গুরুতর আহত হন। এরপর থেকে তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আজ বুধবার বেলা একটার দিকে পাভেল মারা যান। তাঁর মৃত্যুসংবাদ গ্রামে পৌঁছানোর পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দুই পক্ষে আবারও পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। পাভেলের বাড়িতে বেড়াতে আসা কয়েকজন নারী ও শিশু ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায়নি।
ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল কাদের মিয়া প্রথম আলোকে জানান, খবর পেয়ে থানা থেকে পুলিশের একটি দলকে রঘুনাথপুর  গ্রামে পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।  

রঘুনাথপুর গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বড়হিত ইউপি নির্বাচনে ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সদস্য পদে পাভেল মিয়ার প্রতিবেশী মো. মতিউর রহমান ওরফে বাচ্চু নির্বাচন করেন। পাভেল ছিলেন তাঁর (মতিউর রহমান) সমর্থক। অন্যদিকে পাভেলের পাশের বাড়ির মো. আবদুস সালাম, রমজানসহ আরও কয়েকজন আরেক ইউপি সদস্য প্রার্থী মোহাম্মদ আলীকে সমর্থন করেন। নির্বাচনে বিজয়ী হন মোহাম্মদ আলী।

পাভেলের আত্মীয় মো. জুয়েল মিয়া বলেন, নির্বাচনের পরদিন সকালে বিজয়ী ইউপি সদস্য প্রার্থী মোহাম্মদ আলীর সমর্থক আবদুস সালামসহ কয়েকজন পরাজিত প্রার্থী মতিউর রহমানের পক্ষে কাজ করার জন্য পাভেল মিয়া ও তাঁর বাবা নুরুল আমীনকে গালাগাল করতে থাকেন। এ নিয়ে দুইপ ক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। বেলা ১১টার দিকে আরেক প্রতিবেশী ও মোহাম্মদ আলীর সমর্থক রমজান আলী তাঁর দলবল নিয়ে পাভেলের বাড়ির সামনে এসে পাভেলসহ কয়েকজনকে গালাগাল করতে থাকেন।

এর প্রতিবাদ করলে সালাম ও রমজানের পক্ষের লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে পাভেলের পক্ষের লোকজনের ওপর হামলা চালান। এ সময় পাভেলের মাথায় আঘাত লাগলে তিনি মাটিয়ে পড়ে যান। এরপর স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আজ দুপুরে পাভেল মারা যান।

পরাজিত ইউপি সদস্য প্রার্থী মতিউর রহমানের সমর্থকের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগের বিষয়ে বিজয়ী ইউপি সদস্য প্রার্থী মোহাম্মদ আলীর মুঠোফোনে করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এ হামলায় আহত আরও তিনিজন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁরা হলেন পাভেলের বাবা নুরুল আমিন (৪৮), ফুফা রইছ উদ্দিন (৬৫) ও তাঁর স্ত্রী হাজেরা খাতুন (৫০)।

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি মো. আবদুল কাদের মিয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোর কাছে নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় আহত তরুণের মৃত্যুর সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, পুলিশ এ ঘটনার বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে। এ ঘটনায় পাভেল মিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়নি।