নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা ও একাধিক কৃষক বলেন, এ বছর সুনামগঞ্জের উজান থেকে নেমে আসা পানি জেলার তিতাস নদ দিয়ে বিভিন্ন উপজেলার ফসলি জমিতে নেমেছে। এই পানি মেঘনা দিয়ে সরে যাওয়ার কথা। কিন্তু কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামের বাঁধের কারণে এই পানি সরতে পারেনি। এতে কৃষকদের বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করছেন তাঁরা।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এ বছর বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ৩১২ হেক্টর। কিন্তু শিলাবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে উপজেলার ২৭০ হেক্টর বোরো ধানের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের ২ হাজার ৫০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। উপজেলায় কৃষি কার্যালয়ের কার্ডধারী ৫৫ হাজার কৃষক রয়েছেন। এর বাইরে আরও রয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উজানের পানিতে নাসিরনগর ছাড়াও সদর উপজেলায় ১৫ হেক্টর, আশুগঞ্জে ৮ হেক্টর, বিজয়নগরে ১৫ হেক্টর, বাঞ্ছারামপুরে ১৫ হেক্টর, কসবায় ৫ হেক্টর, আখাউড়ায় ১৫ হেক্টর এবং নবীনগর উপজেলায় ১৫ হেক্টর বোরো ধানের ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নাসিরনগর উপজেলায়। জেলার প্রায় চার থেকে পাঁচ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলার অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ জন কৃষকের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা বলেন, এ বছর কৃষকদের এক থেকে দেড় হাজার হেক্টর বোরো ধানের জমি তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় সাত থেকে আট হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে ৪ দশমিক ২ থেকে ৪ দশমিক ৫ টন ধান হয়। প্রতি টন ধানের বাজারমূল্য ২১ হাজার ২৫০ টাকা। সেই হিসাবে দেড় হাজার হেক্টর জমিতে ৬৩ হাজার টন ধান হওয়ার কথা। যার বাজারমূল্য প্রায় ১৩ কোটি ৩৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
গতকাল সকালে ডাকবাংলো এলাকা থেকে নৌকায় মেদির হাওরে গিয়ে দেখা যায়, অনেক জমি পুরোপুরি পানিতে ডুবে আছে। হাঁটু ও কোমর পানিতে নেমেই এখন কৃষকেরা ধান কাটছেন।
সুধীর ঋষি বলেন, এনজিও থেকে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ৮ কানি বোরো ধান চাষ করেছেন তিনি। তাঁর জমিও পানিতে ডুবে গেছে। বর্তমানে দৈনিক ৭০০ টাকা মজুরিতে ৫ জন শ্রমিক লাগিয়ে পানির নিচে থাকা ধান কাটাচ্ছেন। সব মিলিয়ে তিন থেকে চার কানি ধান কাটতে পারবেন বলে ধারণা করছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ তারেক প্রথম আলোকে বলেন, ঝড়, শিলাবৃষ্টি ও হাওর থেকে নেমে আসা পানি সরতে না পারায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে না। এখন পর্যন্ত ১৭ থেকে ১৮ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে।
তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হবে বলে জানালেন আবু সাঈদ তারেক। তিনি বলেন, চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। বাদ পড়া আরও প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের নামের তালিকা করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বলা হয়েছে। আমন মৌসুমে কৃষকদের প্রণোদনা দেওয়া হবে।