উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প ও সান্তাহার-রহনপুর রেলপথ বাস্তবায়নের দাবি
বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের দুটি প্রকল্প প্রস্তাবিত ‘উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প’ ও পশ্চিম রেলের অধীন ‘সান্তাহার-রহনপুর রেলপথ প্রকল্প’ অবিলম্বে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ। রাজশাহী নগরের সাবেহ বাজার জিরো পয়েন্টে আজ বুধবার সকাল ১০টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে এই দাবি জানানো হয়। কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজশাহীর বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনও।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও সমাবেশে মূল দাবি উপস্থাপন করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সাংবাদিক আকবারুল হাসান মিল্লাত, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান, সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশিষ প্রামাণিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী বরজাহান, উন্নয়নকর্মী গোলাম নবী, নওগাঁর সাংবাদিক রেজাউল ইসলাম, নারীনেত্রী সেলিনা বেগম, প্রকৌশলী খাজা তারেক, শিক্ষক আলাউদ্দিন আল আজাদ, সাংবাদিক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফাত্তাহ, এ কে এম যোবায়েদ হোসেন, চিকিৎসক জাহিদ হাসান, আল-আমিন প্রমুখ।
সমাবেশ থেকে প্রস্তাবিত উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ এ প্রকল্প নিয়ে দীর্ঘ দুই যুগ করে আন্দোলন করে আসছে। সরকারের ডেলটা প্ল্যানে থাকা এই প্রকল্প বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি বলেও উল্লেখ করেন তাঁরা। তাঁরা বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল হিসেবে উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন বরেন্দ্র অঞ্চলের লোকজন। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও ছিল। বরেন্দ্র অঞ্চলকে মরুকরণের হাত থেকে রক্ষা ও ভূ-উপরস্থ পানির ব্যবহারের মাধ্যমে এ অঞ্চলের কৃষিতে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন–সংগ্রাম হয়েছে।
বক্তারা বলেন, প্রকল্প দুটি বাস্তবায়িত হলে রাজশাহী একদিকে মরুকরণের হাত থেকে বাঁচবে, অন্যদিকে দেশের জন্য উদ্বৃত্ত ফসলের জোগান পাওয়া যাবে।
অন্যদিকে সান্তাহার-রহনপুর রেলপথ প্রকল্প নিয়ে বক্তারা বলেন, এই রেলপথ প্রকল্পটি দীর্ঘ আট যুগের বেশি সময় ধরে ফাইলবন্দী। পশ্চিমাঞ্চল রেলপথের সান্তাহার থেকে রহনপুর পর্যন্ত ৯৯ কিলোমিটার রেলপথ প্রকল্প এত দিনেও আলোর মুখ দেখেনি। এখন রহনপুর থেকে সান্তাহার যেতে নাটোরের অতিরিক্ত পথ ঘুরে আসতে হয়। তাঁরা বলেন, প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখলে কৃষিভিত্তিক উত্তরাঞ্চলের কৃষিপণ্য সহজে বিপণনের ক্ষেত্রে অবদান রাখবে। এতে অর্থনীতির প্রসার ঘটবে। এ অঞ্চল হবে আরও সমৃদ্ধ।
বক্তারা বলেন, বর্তমান সরকার নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বর্তমানে রহনপুর ও সান্তাহার রেলপথ প্রকল্পটি নতুন করে বাস্তবায়ন করলে এ অঞ্চলে নতুন আশার সঞ্চার সৃষ্টি করবে।
রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ১৯২০ সালে তৎকালীন প্রশাসন সরেজমিন রেলওয়ে প্রকল্পটির সার্ভে সম্পন্ন করে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে তিনবার জরিপের প্রতিবেদন যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হলেও ফাইলটি বারবার চাপা পড়ে যায়। তবে দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আশার সঞ্চারিত হলেও ৭৫-এর ১৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর প্রকল্পটিও মুখ থুবড়ে পড়ে। তিনি আরও বলেন, প্রকল্প দুটি বাস্তবায়িত হলে একদিকে যোগাযোগ ও অন্যদিকে পণ্য পরিবহনে সুবিধা হবে। রাজশাহী একদিকে মরুকরণের হাত থেকে বাঁচবে, অন্যদিকে দেশের জন্য উদ্বৃত্ত ফসলের জোগান পাওয়া যাবে।