নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল ফ্ল্যাগ রেলস্টেশনে গত শনিবার রাতে স্বামীকে মারধর করে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় পুলিশ দুজনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় নারীর নিরাপত্তাসহ নানা বিষয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে কিশোরগঞ্জের ভৈরবের শিক্ষাবিদ উলফাতআরা জাহানের সঙ্গে। তিনি সরকারি জিল্লুর রহমান মহিলা কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এবং জাতীয় মহিলা সংস্থা ভৈরবের সাবেক চেয়ারম্যান।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: নারীর প্রতি ধর্ষণের মতো অপরাধের ঘটনাগুলো বেশ প্রকাশ্য স্থানেই হচ্ছে। এসব প্রতিরোধে আশপাশের লোকজনের তেমন সাড়া নেই কেন?
উলফাতআরা জাহান: পাবলিক প্লেসে সব শ্রেণির মানুষ থাকবে। ভালো ও মন্দ মিলিয়েই থাকবে। সে কারণে পাবলিক প্লেসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সরব উপস্থিতি জরুরি। কিন্তু এখানে বিপরীত চিত্র। ফলে অপরাধীরা অপরাধ ঘটানোর জন্য পাবলিক প্লেসকেই নিরাপদ মনে করছে। আর মানুষের সাড়া না দেওয়ার মূল কারণ নিরাপত্তাহীনতা। উপকার করতে এসে ফেঁসে যাওয়ার ভয়। আইন ও সমাজ প্রতিবাদী মানুষটির সহায়ক শক্তি হতে পারেনি। ফলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকে অন্যায়টা সহ্য করে নিরাপদে কেটে পড়ছে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: নারীর সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন বলে মনে করেন?
উলফাতআরা জাহান: যতটা সহনশীল হওয়া প্রয়োজন ছিল, ততটা নয়। নারীর সঙ্গে যেকোনো অশোভন আচরণ করে ফেলা যায়। নারীরা সেটি মেনে ও মানিয়ে নেবে—বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এমন দৃষ্টিভঙ্গি। সবই ঠিক, কিন্তু তুমি নারী, তোমার বেলায় যায় না, ভেবে আগাও, পরে আরও সমস্যা বাড়বে, বদনাম হয়ে যাবে—এ ধরনের কথাবার্তা সমাজকাঠামোতে নারীর দুর্বল অবস্থানকে আরও দুর্বল করে দেয়।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: নারীর প্রতি বিকৃত রুচি না কমে বাড়ছে কেন?
উলফাতআরা জাহান: বড় কারণ দুর্বল পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষা, আইনের সঠিক প্রয়োগ না হওয়া। দেখা যায়, পরিবারের সব সদস্যের অবস্থান এক ঘরে। কিন্তু ভাবনায় ও কর্মে তারা পৃথক। সমাজবদ্ধ হয়ে সামাজিক সমস্যা দূর করার দলগত প্রয়াস কমে আসছে। সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় সাংস্কৃতিক চর্চা এখন দূর অতীত। ফলে হিংস্রতার সময় কারও মনে সামাজিক ও পারিবারিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি মাথায় আসছে না। বলা যায়, দুর্বল আইন ও প্রয়োগ কম থাকা বিকৃতরুচিকে উসকে দিচ্ছে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার উপায় কী?
উলফাতআরা জাহান: কাজটি খুব কঠিন নয়। তবে পরিকল্পনাটি হতে হবে সমন্বিত। শুধু শক্ত আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করে পারিবারিক ও সামাজিক শিক্ষার জায়গাটি দুর্বল করে রাখলে হবে না। অপরাধ করলে শাস্তি পেতে হয়, চোখের সামনে বেশি বেশি এমন উদাহরণ থাকতে হবে। তরুণদের মানবিক মূল্যবোধ তৈরি ও জাগ্রত হয় মূলত সামাজিক কাজে যুক্ত থাকার মধ্য দিয়ে। এই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। বিপদে এগিয়ে এলে নিজের বিপদ বাড়বে না, এমন ভীতি দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।