একসঙ্গে বেড়ে ওঠা, একসঙ্গেই চলে যাওয়া

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হাফিজুর রহমান ও আরিফুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

হাফিজুর রহমান ও আরিফুল ইসলাম। দুজনেরই বয়স ৩৬ বছর। সম্পর্কে আপন চাচাতো ভাই। একই বাড়িতে, একই সঙ্গে বড় হয়েছেন তাঁরা। এলাকায় দুজনে পরিচিত ‘বন্ধু জুটি হিসেবে। আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক পদে একজন আরএফএল ও অন্যজন এরিস্ট্রোফার্মায় চাকরি করতেন। ইচ্ছে ছিল দুজনে একই সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করবেন, পশু কোরবানি দেবেন।

সে পরিকল্পনা নিয়েই গতকাল শুক্রবার সকালে দুজনে মোটরসাইকেলে গাজীপুর থেকে নিজেদের বাড়ি নাটোরের লালপুরে ফিরছিলেন। টাঙ্গাইল-মির্জাপুর মহাসড়কের জামুর্কি এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে একটি গাড়ি ধাক্কা দেয় তাঁদের মোটরসাইকেলে। এতে মৃত্যু হয় দুজনের। যে মাঠে তাঁদের ঈদের নামাজ পড়ার কথা ছিল, সেই মাঠে আজ শনিবার সকালে তাঁদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

দুর্ঘটনায় নিহত হাফিজুর রহমান ও আরিফুল ইসলাম নাটোরের লালপুর উপজেলার আড়বাব ইউনিয়নের কেশভবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা।

আরিফুলের ভাই শরিফুল ইসলাম আজ সকালে প্রথম আলোকে জানান, হাফিজুর ও আরিফুলের জন্ম ও বেড়ে ওঠা একসঙ্গে, একই বাড়িতে। ছোট থেকে তাঁরা পরস্পরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। পড়ালেখা শেষে হাফিজুর আরএফএল কোম্পানির আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক হিসেবে গাজীপুরে ও আরিফুল এরিস্ট্রোফার্মা ঢাকায় একই পদে কর্মরত ছিলেন।

শুক্রবার সকালে আরিফুল গাজীপুরে এসে হাফিজুরকে নিয়ে একই মোটরসাইকেলে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। টাঙ্গাইল-মির্জাপুর মহাসড়কের জামুর্কি এলাকায় পৌঁছালে পেছন থেকে একটি গাড়ি তাঁদের মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই হাফিজুরের মৃত্যু হয়। আহত আরিফুলকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনিও মারা যান। আনুষ্ঠানিকতা শেষে গতকাল রাতে তাঁদের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। আজ শনিবার বেলা ১১টায় গ্রামের মাঠে তাঁদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় কেশভবাড়িয়াসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ অংশ নেন। পরে স্থানীয় কবরস্থানে তাঁদের দাফন করা হয়।

শনিবার সকালে কেশভবাড়িয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের আনন্দ ভুলে গ্রামের সবাই মাঠে জানাজার জন্য ছুটছেন। ঈদগাহ মাঠ সাজানোর প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু শোকের কারণে সাজসজ্জা স্থগিত রয়েছে।

নিহত হাফিজুর রহমানের বাবা হায়দার আলী বলেন, হাফিজুরের সাত বছরের একটি ছেলে ও আরিফুলের সাড়ে তিন বছরের একটি ছেলে আছে। ঈদে বাবা-চাচা বাড়িতে আসবে, এমন অপেক্ষার প্রহর গুনছিল। অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে, বাবা-চাচা এসেছেন। কিন্তু তাঁদের নিথর দেহ দেখে তারাও বাক্রুদ্ধ। পরিবারের সবাই কাঁদছেন। কাউকে সান্ত্বনা দেওয়ার কেউ নেই।