এক জোড়া টিয়াছানা ও পুলিশ–বাড়িওয়ালার মানবিকতা

উদ্ধারের পর বাড়িওয়ালার কাছে ছানা দুটি ফিরিয়ে দেয় পুলিশ
ছবি: প্রথম আলো

বাড়ির উঠানে মরা নারকেলগাছ। সে গাছের চূড়াতে বাসা বেঁধেছিল একজোড়া টিয়া পাখি। ডিম ফুটিয়ে তুলেছিল দুটি বাচ্চা। হঠাৎ এক সন্ধ্যায় বাড়ির মালিক দেখলেন, বাচ্চা দুটি নেই। যেন মাথায় বাজ পড়ল তাঁর। খুদে বার্তায় বিষয়টি জানালেন পুলিশ সুপারকে। এরপর টিয়ার খোঁজে হন্যে পুলিশ। নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে উদ্ধার হয়েছে বাচ্চা দুটি।

আজ শনিবার টিয়া পাখির বাচ্চা উদ্ধার করেছে পাবনার আমিনপুর থানার পুলিশ। পরে বাচ্চা দুটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে প্রকৃতির কাছে। বিষয়টিকে বাড়ির মালিক ও পুলিশের মানবিক উদ্যোগ বলে মনে করছে স্থানীয় বন্য প্রাণী বিষয়ক সংগঠনগুলো।

আমিনপুর থানা–পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জেলার বেড়া উপজেলার নয়াবাড়ী গ্রামের সরওয়ার আলমের (৫৮) বাড়ির নারকেলগাছের চূড়ায় প্রায় আড়াই মাস আগে বাসা বাঁধে পাখি দুটি। গাছটির উচ্চতা প্রায় ৪০ ফুট। কিছুদিন আগে বাসায় দুটি টিয়া পাখির বাচ্চা দেখতে পান বাড়ির মালিক। প্রতিদিন বাচ্চা দুটিকে খাবার খাওয়াতো মা পাখিটা। বিষয়টি দেখতে দেখতে সরওয়ার আলমের মায়া তৈরি হয় বাচ্চাগুলোর প্রতি। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ তিনি দেখেন, বাসায় বাচ্চা দুটি নেই। হতভম্ব হন সরওয়ার আলম। প্রতিবেশীদের কাছে খোঁজ নিয়ে বাচ্চা দুটির কোনো হদিস পান না।

এরপর খুদে বার্তায় বিষয়টি পাবনার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খানকে জানান। পুলিশ সুপার আমিনপুর থানাকে বিষয়টি অবগত করেন এবং বাচ্চাসহ পাখি দুটিকে উদ্ধারের নির্দেশ দেন। এরপর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন কবিরের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল টিয়া উদ্ধার অভিযানে নামে।

একটি খুদে বার্তায় পুলিশ এভাবে বাচ্চা দুটি উদ্ধারে অভিযান চালাবে ভাবতেও পারিনি। আমি ভীষণ খুশি। পুলিশ সুপার ও আমিনপুর থানা–পুলিশকে ধন্যবাদ।
বাড়িওয়ালা সরওয়ার আলম

ওসি রওশন কবির জানান, অভিযানের একপর্যায়ে খবর পান, উপজেলার নয়াবাড়ি শীলপাড়া গ্রামের এক ব্যক্তি বাচ্চা দুটিকে চুরি করেছেন। পরে তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। জিজ্ঞাসাবাদে ওই ব্যক্তি জানান, তিনি বাচ্চা দুটি চুরির পর ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন। সে টাকা দিয়ে একটি শার্ট ও স্যান্ডেল কিনে খরচও করেছেন। পরে ওই ব্যক্তির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ টিয়ার ক্রেতার খোঁজ শুরু করেন। একপর্যায়ে খোঁজ মেলে টিয়ার ক্রেতার। কিন্তু কিছুতেই তিনি টিয়া কেনার কথা স্বীকার করেন না। পরে পুলিশের বহু চেষ্টায় শনিবার দুপুরে তিনি টিয়া পাখির বাচ্চা দুটি থানায় পৌঁছে দেন। এরপর সরওয়ার আলমের বাড়িতে নিয়ে বাচ্চা দুটিকে আবার প্রকৃতির কাছে ছেড়ে দেওয়া হয়।

টিয়া পাখির বাচ্চা দুটি উদ্ধার করে বাড়ির মালিকের সামনে হাজির করা হয়। পরে তিনি নিজেই বাচ্চা দুটিকে আবার উন্মুক্ত আকাশে ছেড়ে দিয়েছেন
ছবি: প্রথম আলো

ওসি রওশন আলম প্রথম আলোকে বলেন, টিয়া পাখির বাচ্চা দুটি উদ্ধার করে বাড়ির মালিকের সামনে হাজির করায় তিনি চরম খুশি হয়েছেন। পরে তিনি নিজেই বাচ্চা দুটিকে আবার উন্মুক্ত আকাশে ছেড়ে দিয়েছেন। এতে তাঁরাও মানসিক শান্তি পেয়েছেন। পরে টিয়ার বাচ্চা চুরি করা ব্যক্তি ও ক্রেতাকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

বাড়িওয়ালা সরওয়ার আলম বলেন, ‘একটি খুদে বার্তায় পুলিশ এভাবে বাচ্চা দুটি উদ্ধারে অভিযান চালাবে ভাবতেও পারিনি। আমি ভীষণ খুশি। পুলিশ সুপার ও আমিনপুর থানা–পুলিশকে ধন্যবাদ।’

ঘটনাটি নিয়ে জেলার বন্য প্রাণী বিষয়ক সংগঠন ন্যাচার অ্যান্ড ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন কমিটির সভাপতি এহসান আলী বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাখির প্রতি এই ভালোবাসা একটি দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ। বাড়ির মালিক সরওয়ার আলম ও জেলা পুলিশ উভয়ই কাজটিতে চরম মানবিকতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। দেশের প্রত্যেকটি মানুষের পাখির প্রতি এমন প্রেম তৈরি হোক, আমরা সেটাই প্রত্যাশা করি।’