আরটি-পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষার জন্য হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে গত এক সপ্তাহে করোনার নমুনা সংগ্রহ করা হয় ৯১৩ জনের। এর মধ্যে ৩১১ জনের নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন ‘অকার্যকর’ এসেছে। অর্থাৎ তাঁরা করোনা ‘নেগেটিভ’ বা ‘পজিটিভ’ নন। তাঁদের পুনরায় নমুনা জমা দিতে হবে। এভাবে প্রতিনিয়ত করোনা পরীক্ষা করতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন শত শত মানুষ।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের দাবি, ল্যাবের ত্রুটির কারণে এই সমস্যা হচ্ছে। অপর দিকে ল্যাব কর্তৃপক্ষের দাবি, নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে ত্রুটি থাকায় পরীক্ষার ফল ‘অকার্যকর’ আসছে।
জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আরটি-পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষার জন্য হবিগঞ্জের সাতটি স্থানে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ৭০ ভাগ নমুনা সংগৃহীত হয় হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে। নমুনাগুলো সংগ্রহের পর তা পাঠিয়ে দেওয়া হয় সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে। সেখানে নমুনা পরীক্ষার পর প্রতিবেদন হবিগঞ্জে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়।
২২ জুলাই থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের মোট নমুনা সংগ্রহ করা হয় ৯১৩ জনের। সেগুলো পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে। সেখান থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ৯১৩ জনের মধ্যে ৩১১ জনের নমুনা পরীক্ষার ফল ‘অকার্যকর’।
একইভাবে ২১ জুলাই নমুনা সংগ্রহ করা হয় ১২২ জনের। তাঁর মধ্যে পরীক্ষার ফল ‘অকার্যকর’ আসে ৩৮ জনের। ২০ জুলাই নমুনা নেওয়া হয় ১৬১ জনের। তার মধ্যে ফল ‘অকার্যকর’ আসে ৬২ জনের। অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশ বা তার বেশি নমুনা পরীক্ষার ফলেই এমনটা হচ্ছে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবের দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের চারটি জেলা থেকেই এই ল্যাবে নমুনা আসে। এর মধ্যে হবিগঞ্জ জেলা থেকে আসা নমুনা পরীক্ষার ফল ‘অকার্যকর’ হচ্ছে বেশি। ফলে তাঁদের ধারণা, হবিগঞ্জে নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সমস্যা রয়েছে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা পরীক্ষা ল্যাবের ইনচার্জ ও সহকারী অধ্যাপক নুরুন্নবী আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, করোনা পরীক্ষার ফল ‘অকার্যকর’ আসার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে, ভালোভাবে নমুনা সংগ্রহ না করা এবং নমুনা সংগ্রহের পর ল্যাবে পাঠাতে দেরি করে ফেলা। তাই নমুনা ভালোভাবে সংগ্রহ করলে ও দ্রুত ল্যাবে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারলে এই সমস্যা কেটে যাবে।
সাম্প্রতিক সময়ে যাঁদের নমুনা পরীক্ষার ফল ‘অকার্যকর’ এসেছে, তাঁদের মধ্যে আছেন তন্দ্রা রায় ও এস এ এম মহসিন চৌধুরী। দুজনই হবিগঞ্জ শহরের বাসিন্দা। ২১ জুলাই তাঁরা নমুনা জমা দেন হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে। চার দিন পর জানানো হয়, তাঁদের পুনরায় নমুনা দিতে হাসপাতালে যেতে হবে। কেন পুনরায় নমুনা দিতে হবে, সেই প্রশ্নের উত্তর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তাঁরা পাননি।
একইভাবে এক সপ্তাহ আগে নমুনা দিয়েছিলেন জেলা শহরের বাসিন্দা রিংকু কুমার। তিনি বলেন, প্রথম যখন নমুনা দেন, তখন তাঁর শারীরিক অবস্থা ছিল এক রকম। এখন চার দিন পর শারীরিক অবস্থা অন্য রকম। এ অবস্থায় যদি আবারও নমুনা দিতে হয়, এবার পরীক্ষার ফল কী আসবে, তা নিয়ে চিন্তিত তিনি।
রবিনা আখতার নামে এক নারী বলেন, একবার দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে নমুনা দিতে হয়েছে। এতে বিরাট এক ভোগান্তি। তা ছাড়া করোনাকালে হাসপাতালে যেতে এমনিতেই ভয় লাগে। আবার যাঁরা নমুনা জমা দিতে এসে সারিতে দাঁড়াচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ নিশ্চয় করোনায় সংক্রমিত। নিজে করোনায় সংক্রমিত না হলেও সেখানে গেলে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। তাই এভাবে বারবার নমুনা দেওয়া সম্ভব নয়। নমুনা সংগ্রহ ও ল্যাবে পাঠানোর ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলে তা ঠিক করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয় বলছে, হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালের একটি বুথের মাধ্যমে দুজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নমুনা সংগ্রহ করে থাকেন। প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ জন মানুষ নমুনা দিতে আসেন। দুজনের পক্ষে এত মানুষের নমুনা সংগ্রহ করা কঠিন এক কাজ। এই হাসপাতালে আরও চার-পাঁচজন নমুনা সংগ্রহকারী প্রয়োজন।
হবিগঞ্জের ডেপুটি সিভিল সার্জন মুখলেছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এখানে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে ল্যাবে। ল্যাবের ত্রুটির কারণে নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদন অকার্যকর আসছে।’