এক সপ্তাহেও গ্রেপ্তার নেই, মামলা তুলে নিতে হুমকির অভিযোগ

মানিকগঞ্জ জেলার মানচিত্র

মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের বাঁচামারা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ইউপি সদস্যের সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্যে পড়ে সমেলা বেগম (৫০) নামের এক নারী নিহত হন। ঘটনার পরদিন নিহত সমেলার ছেলে ইলিয়াস হোসেন বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। নিহত সমেলার পরিবারের অভিযোগ, মামলা হওয়ার ছয় দিনেও কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। উল্টো মামলা তুলে নিতে তাঁদের চাপ দেওয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দৌলতপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইকবাল আহমেদ খান আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে একাধিক স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। তবে আসামিরা পলাতক থাকায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে প্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা

৫ জানুয়ারি বাঁচামারা ইউপিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন দুপুরে ডালুটিয়া গ্রামের বাঁচামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই সদস্য প্রার্থী ওয়াজেদ আলী সরকার ও সারোয়ার হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মধ্যে পড়েন ভোট দিতে যাওয়া সমেলা বেগম। এরপর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যান। বাড়িতে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরই তাঁর মৃত্যু হয়।

তবে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বাঁচামারা ইউপির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত সদস্য ওয়াজেদ আলীর কর্মী-সমর্থকেরা বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে সমেলা বেগমকে হত্যা করেছে। এই মামলায় চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন আইয়ান (৬৫), আবদুস সালাম (৫০), লিয়াকত আলী শেখ (২৮) ও আরিফ শাহরিয়ার (৩০)। তাঁরা সবাই ওয়াজেদ আলীর সমর্থক বলে জানা গেছে।

নিহত সমেলা বেগম পরাজিত প্রার্থী সারোয়ার হোসেনের খালা। মৃত্যুর পর সারোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, তাঁর খালা ভোট দিতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর কয়েকজন ধরে তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দেন। বেলা একটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

ওই সময় তিনি পিটিয়ে হত্যার ব্যাপারে কোনো অভিযোগ করেননি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সারোয়ার হোসেন বলেন, ওই দিন সংঘর্ষের সময় তিনি ধাওয়া খেয়ে ওই কেন্দ্র থেকে সটকে পড়েছিলেন। তাই তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যুর কারণ জানতে পারেননি। পরে তিনি জেনেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ওয়াজেদ আলীর সমর্থকেরা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তাঁর খালাকে হত্যা করেছে।

এদিকে সমেলা খাতুনের মৃত্যুর পর ওই দিন পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছিল। সেখানেও ওই নারীর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইকবাল আহমেদ বলেন, সমেলা খাতুনের পরিবারের দাবি, তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যদিও সুরতহাল প্রতিবেদনে নিহতের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হয়ে বলা যাবে না। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এখনো হাতে আসেনি। ঢাকার মহাখালীতে লাশের রাসায়নিক পরীক্ষাও করা হচ্ছে। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা কেটে যাবে বলে আশা করেন তিনি।

মামলা তুলে নিতে হুমকির অভিযোগ

সমেলা খাতুন হত্যা মামলায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার না হলেও তাঁর পরিবারকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আসামিদের আত্মীয়স্বজন ও ওয়াজেদ আলীর সমর্থকেরা চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মামলার বাদী ইলিয়াস হোসেন বলেন, ওয়াজেদ আলীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও অজ্ঞাত কারণে ওয়াজেদ আলীর বিরুদ্ধে মামলা হয়নি। মামলা করার পর প্রায় এক সপ্তাহ পার হলেও এখন পর্যন্ত একজন আসামিকেও গ্রেপ্তার করা হয়নি। উল্টো আসামিদের আত্মীয়স্বজন ও ওয়াজেদ আলীর সমর্থকেরা মামলা তুলে নিতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।

অভিযোগের বিষয়ে ওয়াজেদ আলী সরকার বলেন, নির্বাচনের দিন তিনি কেন্দ্রের বাইরে ছিলেন। কে বা কারা হামলা করেছে, সেটা তাঁর জানা নেই। পরে শুনেছেন এক ভোটার ভোট দিতে এসে মারা গেছেন। মামলা তুলে নিতে ভয়ভীতি দেখানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি বা তাঁর সমর্থক কেউ এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। তাই মামলা তুলে নেওয়ার ব্যাপারে হুমকি দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইকবাল আহমেদ খান বলেন, মামলার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। আসামিদের গ্রেপ্তারেও সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি। মামলা তুলে নিতে কেউ চাপ সৃষ্টি করলে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পরামর্শ দেন তিনি।