‘এখন মায়ের কী হবে’
কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য মো. সোহেলের সঙ্গে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তাঁর সহযোগী হরিপদ সাহা (৫০)। হরিপদের মৃত্যুতে অসহায় হয়ে পড়েছেন তাঁর মা রেণু বালা সাহা।
বৃদ্ধা রেণু বছর দেড়েক ধরে বিছানায় পড়ে আছেন। হরিপদই ছিলেন মায়ের একমাত্র অবলম্বন। খাওয়াদাওয়া থেকে প্রাকৃতিক কর্ম—সবই তিনি বিছানায় সারেন। প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে হরিপদ মায়ের যত্নআত্তি করতেন। মাকে গোসল করে খাইয়ে দিয়ে হরিপদ দুপুরের দিকে কাউন্সিলর সোহেলের কার্যালয়ে গিয়ে বসতেন। তাঁর মৃত্যুতে এখন বৃদ্ধার দেখভাল কে করবেন, তা নিয়ে চিন্তিত পরিবারের সদস্যরা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম পুরাতন মহাসড়কের কুমিল্লা নগরের নূরপুর এলাকা পেরিয়ে তেলিকোনা সাহাপাড়া এলাকা। মূল সড়ক দিয়ে গলিতে প্রবেশের পর সরু পথের শেষ প্রান্তে হরিপদ সাহার টিনের ঘর। দুই কক্ষের ঘরের একটিতে শুয়ে আছেন রেণু। কোনো কথা বলছেন না তিনি। তাঁর পাশে বসা মেয়ে ভুলু রানী সাহা।
ভুলু বলেন, তাঁর মা এখনো জানেন না হরিপদ নেই। উচ্চ স্বরে একবার রেণু বালার কাছে হরিপদের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হরিপদ বাজারে গেছেন। আসবেন।
রেণু বালার ছয় মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে হরিপদ সবার ছোট। প্রায় ২০ বছর আগে হরিপদের বাবা মারা গেছেন। ছয় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। এর মধ্যে তিন বছর আগে এক বোন মঞ্জু রানী সাহা মারা গেছেন। চলতি বছর হরিপদের স্ত্রী রিংকু রানী সাহাও মারা যান। জীবিত পাঁচ বোন সবাই স্বামীর বাড়িতে থাকেন।
ভুলু রানী বলেন, ‘মাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। কে তাঁকে দেখবেন? আমরা বোনেরা স্বামীর বাড়িতে থাকেন। হরিপদের কোনো সন্তানও নেই। আমাদের আর্থিক অবস্থাও ভালো নয়। কাউন্সিলর সোহেল আমার ভাইকে খুব মায়া করতেন। তিনি টাকা দিতেন। ওই টাকায় আমার মা ও ভাই চলতেন। এখন মায়ের কী হবে? এ ব্যাপারে সরকারের কাছে সহায়তা চাই। আমার ভাই ও সোহেল ভাইকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত বলেন, দল সব সময়ই হরিপদের পরিবারের পাশে থাকবে।
গত সোমবার বিকেল সাড়ে চারটায় নগরের পাথুরিয়াপাড়ায় নিজের রড-সিমেন্টের দোকান থ্রি স্টার এন্টারপ্রাইজে কাউন্সিলর মো. সোহেল ও তাঁর সহযোগী হরিপদ সাহাকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় আরও চারজন গুলিবিদ্ধ হন।