‘এ কদিনে শীত হামাকগুলাক কাহিল করি ফেলাইছে’

ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতে বিপর্যস্ত উত্তরের জনজীবন।ছবি: মঈনুল ইসলাম

মাঘের হিমশীতল বাতাসে কাবু হয়ে পড়েছে দেশের উত্তরাঞ্চলের জনজীবন। হিমেল বাতাসের সঙ্গে কুয়াশার দাপট বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। তীব্র শীত ও কুয়াশায় শীতজনিত রোগ বাড়ার পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে ফসলেরও।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল নয়টায় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকাল ছয়টায় রংপুরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নীলফামারীর সৈয়দপুরে রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর একই সময়ে দেশের সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে।

আজ সকালে পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা আগের কয়েক দিনের তুলনায় সামান্য বাড়লেও কমেনি কুয়াশা ও উত্তরের হিমেল বাতাসের দাপট। সকাল ১০টায় সূর্য উঁকি দিলেও রোদের তীব্রতা ছড়ায়নি।

এর আগে গত শুক্রবার থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত টানা ছয় দিন তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যাপ্ত ওঠানামা করে। বয়ে যায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ।

ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসের কারণে অনেকটাই থমকে গেছে রংপুরের জনজীবন। গতকাল রাত থেকেই বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। সকাল থেকে ঘন কুয়াশায় সামনের পথ পরিষ্কার দেখা যায় না। তাই সড়কগুলোয় হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। অফিস খোলার দিন হলেও শীতের কারণে রংপুর শহরের রাস্তাঘাটে মানুষ অনেকটাই কম।

শীত আর বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যেও কাজে ছুটছেন রংপুরের বিভিন্ন পেশার মানুষ।
ছবি: মঈনুল ইসলাম

দেশের উত্তরাঞ্চলে মাঘের হিমেল বাতাসে কনকনে শীত অনুভূত হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। গরম কাপড়ের পাশাপাশি অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে করছেন শীত নিবারণের চেষ্টা।

আজ সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার শিংপাড়া এলাকায় নির্মাণশ্রমিক রশিদুল ইসলাম জানান, বাতাসের কারণে বেশি ঠান্ডা লাগছে। গতকাল সারা দিন হালকা রোদ থাকলেও ঠান্ডা বাতাস লাগছিল। এ জন্য কাজ করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। ঠান্ডায় হাত-পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া সকালে কুয়াশা থাকায় কাজে বের হতেও দেরি হচ্ছে।
রংপুর নগরের মেডিকেল মোড় এলাকায় দিনাজপুরগামী একটি বাসের চালক রোকন মিয়া বলেন, রাস্তায় এত কুয়াশা যে গাড়ি চালানো খুব কষ্ট। গাড়ির হেডলাইট জ্বালিয়েও বেশি দূরে দেখা যায় না।

নগরের বুড়িরহাট সড়কে দেখা যায় কুয়াশা আর শীতে জবুথবু হয়ে সবজি বিক্রেতারা ভ্যানগাড়ি আর সাইকেলে করে ছুটছেন বাজারে। এ সময় এজাজুল ইসলাম নামের এক সবজি বিক্রেতা বলেন, ‘মাঘ মাসের এ কদিনে শীত হামাকগুলাক (আমাদের) কাহিল করি ফেলাইছে।’

রংপুরে আজ ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন। এই আবহাওয়ায় সকালে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে রংপুর শহরতলীর উত্তম বানিয়া পাড়ার কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা।
ছবি: মঈনুল ইসলাম

এদিকে তীব্র শীত ও কুয়াশার কারণে ইরি-বোরোর বীজতলা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের কৃষক সাবেদুল ইসলাম বলেন, কৃষকেরা বীজতলায় পলিথিন জড়িয়ে দিয়েও রক্ষা করতে পারছেন না। এতে বীজতলার সংকট হতে পারে।

এ সময়ে শীতজনিত রোগ বাড়ছে উত্তরের জেলাগুলোয়। সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ওয়াসিমুল বারী জয় প্রথম আলোকে জানান, শীতজনিত রোগে গত দুই দিনে হাসপাতালে ৩২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তবে সর্দি, কাশিসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রচুর। তাঁরা হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ প্রথম আলোকে বলেন, হিমালয় থেকে সরাসরি বয়ে আসা হিমশীতল বাতাসে পঞ্চগড়সহ এসব জেলায় প্রায় সারা দিনই শীত অনুভূত হয়েছে। গতকাল রাতে কুয়াশা বেড়ে যাওয়ায় বাতাস কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়ে তাপমাত্রা সামান্য বেড়েছে; তবে শীতের অনুভূতি কমেনি। আজ সকাল সাড়ে ১০টায় সূর্যের দেখা মিললেও বাতাস অব্যাহত থাকায় সারা দিনই শীত অনুভূত হতে পারে।